গত ২৭ জুন, রোজ রবিবার, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীতে সাবেক ভিকার জেনারেল ও ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার পল গমেজকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয় এবং একই সঙ্গে নতুন ভিকার জেনারেল ও ক্যাথিড্যাল ধর্মপল্লীর নবাগত পাল-পুরোহিত ফাদার ইম্মানুয়েল কানন রোজারিওকে বরণ করে নেওয়া হয়। বিকাল ৪:৩০ মিনিটে খ্রিস্টযাগের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। খ্রিস্টযাগের পর পরই নাচ, গান, মাল্যদান, উপহার প্রদান ও বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের ইতি টানা হয়। এই মহতী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও। খ্রিস্টযাগে প্রধান পৌরহিত্য করেন বিশপ রোজারিও। তার সহার্পিত খ্রিস্টযাগে আরো উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটিতে কর্মরত ৯জন ফাদার, ১২জন সিস্টার, রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মি. সুকল্লেশ জর্জ কস্তাসহ প্রায় ৪০০ জনের মত খ্রিস্টভক্ত। বিশপ মহোদয় তার বক্তব্যে বলেন, শ্রদ্ধেয় ফাদার পল গমেজ, পাল-পুরোহিত হিসেবে ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীতে অনেক সুন্দরভাবে ও দক্ষাতার সাথে কাজ করেছেন এবং দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু তাই নয়, ভিকার জেনারেল হিসেবেও ধর্মপ্রদেশে আমার হয়ে অনেক গুরু দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন এবং তিনি ধর্মপ্রদেশীয় শিক্ষা কমিশনের শিক্ষা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন; সেজন্য তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশ মণ্ডলির প্রয়োজনে সে যে গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করেছে তার জন্য তাকে সাধু বাদ জানাই এবং প্রার্থনা করি যেন সে যেন সুন্দরভাবে তার গঠনদানের কাজ চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। সেই সাথে নতুন ভিকার জেনারেল ও ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার ইম্মানুয়েলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই এবং বিশ^াস করি সেও তার জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীকে একটি আদর্শ ধর্মপল্লী হিসেবে গড়ে তুলবেন। আর সেই সাথে তার উপর অর্পিত অন্যান্য দায়িত্বগুলি নিষ্ঠার সাথে পালন করবেন।
ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীর পালকীয় পরিষদের সহসভাপতি মি: গাব্রিয়েল হাঁসদা বিদায়ী ফাদার পল গমেজকে ধর্মপল্লীবাসী খ্রিস্টভক্তদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এবং নতুন পাল-পুরোহিত ফাদার ইম্মানুয়েলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ফাদার পল ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীতে আসার পর ধর্মপল্লীতে একটা গতি ফিরে এসেছিল। তিনি নিজে যেমন কাজ করেছেন তেমনি আমাদেরকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়েছেন। তিনি তার উদারতা নিয়ে সবার মধ্যে কাজ করেছেন। আমাদের নতুন পাল-পুরোহিত ফাদার ইম্মানুয়েলও যথেষ্ট দক্ষ ও জ্ঞানী। তার নামের অর্থ যেমন ঈশ^র আমাদের সঙ্গে আছেন তেমনি আমরা বিশ^াস করি, তার মধ্য দিয়ে ঈশ^র নিজেই আমাদের ধর্মপল্লীতে উপস্থিত হবেন।
কারিতাসের আঞ্চলিক পরিচালক মি: সুক্লেশ জর্জ কস্তা বলেন, ‘সাধু পলের ন্যায় ফাদার পলও ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীর বিভিন্ন দিকে গঠনমূলক অনেক পরিবর্তন এনেছেন। যদি তিনি আরো দীর্ঘ থাকতেন তা হলে হয় তো আরো অনেক ভাল হতো। তবে ভবিষ্যত বাংলাদেশ মণ্ডলিতে যারা নেতৃত্ব দিবেন তাদের গঠনের জন্য তিনি যে গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। ফাদার ইম্মানুয়েলকে স্বাগত জানাই। বিশ^াস করি, তার নেতৃত্বে আমরাও উওম মেষপালক ধর্মপল্লীর উত্তম মেষশাবক হয়ে উঠতে পারব। ’
ফাদার পল গমেজ তার অনুভূতি তুলে ধরেন ঠিক এভাবে, ‘আমি ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই চেষ্টা করেছি সকলের সহযোগিতা নিয়ে একটি অংশগ্রহণকারী স্থানীয় মণ্ডলি গড়ে তুলতে, আর সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করে যেতে। পালকীয় কাজে প্রশাসনিক শৃঙ্গলা নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে একটি দায়িত্বশীল পালকীয় পরিষদ গঠন করতে। ধর্মপল্লীর সকল অঙ্গ-সংগঠনগুলির মধ্যে গতি ফিরিয়ে আনতে বা প্রাণের স্পন্দন জাগাতে। ৫ বছর ৬মাস পরে বলতে পারি যে, খ্রিস্টভক্তদের সহায়তায় সেকাজে অনেকাংশেই সফলকাম হয়েছি। যা কিছু ভাল করতে পেরেছে তার জন্য ঈশ^রকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রার্থনা করবেন, বাংলাদেশ বিশপ কন্ফারেন্স আমাকে যে গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন আমি যেন তা নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি।’
নতুন পাল-পুরোহিত ফাদার ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও তার অনুভূতি এভাবে তুলে ধরে বলেন, ‘বিশপ মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই আমাকে তার ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত সিহেবে কাজ করার সুযোগ দানের জন্য। তবে ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লী হচ্ছে ধর্মপ্রদেশের সকল ধর্মপল্লীর মা এবং বিশপের ধর্মপল্লী। তাই মা হিসেবে এই ধর্মপল্লীকে হতে হবে অন্যান্য ধর্মপল্লীর মা বা জননীর মত। আর তা হতে গিয়ে বা করতে গিয়ে আমি অপনাদের বলব না যে, আপনারা আমার ইচ্ছা পালন করেন, আমি তা চাই না। আমিও আপনাদের ইচ্ছা পালন করব সেটাও আমি চাই না। তবে আমি চাই, আমরা সবাই মিলে সেই একজনের ইচ্ছা পালন করি। আর সেই ইচ্ছা হলো ঈশ^রের ইচ্ছা। তাই আজ আমি আপনাদের বলবো আসুন আমরা একসঙ্গে আমাদের ধর্মপল্লীর জন্য ঈশ^রের ইচ্ছা কী তা আবিস্কার করি এবং সেই আনুযায়ী কাজ করতে চেষ্টা করি। সেইসাথে ফাদার পল গমেজ যে শুরু করেছেন এবং ধর্মপল্লীতে যে গতির সঞ্চার করেছেন। সেই গতিময়তা নিয়ে আমরা যেন, ধমপল্লীর প্রতিটি অঙ্গ-সংগঠন কাজ করতে পারি।
পরিশেষে, সাবেক এবং নতুন দুই পাল-পুরোহিত ও ভিকার জেনারেলের জন্য প্রার্থনা করি এবং তাদেরকে জানাই শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। তারা উভয়েই যেন নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ভাল থাকেন, সুস্থ্য থাকেন এবং ঈশ^রের ইচ্ছা পূর্ণ করতে সদা প্রস্তুত থাকেন। তাদের সার্বিক মঙ্গল কামনা করি।
-বরেন্দ্রদূত রির্পোটার
ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপনে বিদায় বরণ অনুষ্ঠান
Please follow and like us: