গত ৪ঠা অক্টোবর সোমবার সাধু আন্তনী’র ধর্মপল্লী মহিপাড়াতে ’সৃষ্টি উদযাপন কাল’ ( (Season of Creation) সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে মিশনপাড়া ও বিভিন্ন গ্রাম থেকে মনোনীত মোট ৬০ জন অংশগ্রহণ করেন। শুরুতেই সিস্টার রেজিনা ও প্রার্থনা পরিচালিকা সুচিত্রার পরিচালনায় প্রার্থনার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। ধর্মপল্লীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছাবাণী রাখেন ধর্মপল্লীর সহকারী পাল-পুরোহিত ফাদার প্যাট্রিক গমেজ। অতঃপর পরিচয় অনুষ্ঠান এবং এর পরপরই ‘লাউদাতো সি’: আমাদের অভিন্ন বসতবাটির পুনরুদ্ধার এই বিষয়টিকে ঘিরে সিবিসিবি ন্যায় ও শান্তি কমিশন ও খ্রিস্টীয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশনের লেখা পত্রের উপর ভিত্তি ক’রে প্রথম উপস্থাপনা রাখেন সিস্টার রেজিনা সরেন, সিআইসি।
’সৃষ্টি উদযাপন কাল’ ও পোপ মহোদয়ের পালকীয় পত্র ‘লাউদাতো সি’র উপর বিস্তারিত আলোচনা করেন শ্রদ্ধেয় ফাদার প্যাট্রিক গমেজ। । তার আলোচনায় তিনি পোপ মহোদয়ের প্রত্যাশাগুলোও তুলে ধরেন। ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবরের পোপ মহোদয়ের দেওয়া কর্মসূচী উল্লেখ করার পর প্যানেলিস্ট হিসেবে পুরুষ মহিলা মোট ১২জন সামনে এসে স্থানীয় পর্যায়ে একেবারে আক্ষরিকভাবেই ব্যক্তি,পরিবার ও সমাজকে সামনে রেখে তাৎক্ষণিক ও দূরবর্তী যে কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন তা হল:
(১) নিজেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকব ও পরিবেশ সুন্দর রাখব;
(২) সেমিনারের বিষয়গুলোর উপর সচেতন হব: পরিবেশ সংরক্ষণ পরিবার ও নিজ গ্রামে।
(৩) নৈতিক অবক্ষয় দূর করব, নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধি করব।
(৪) মাস্ক ব্যবহার করব ও স্বাস্থবিধি মেনে চলব।
(৫) পিতা-মাতা অভিভাবক হিসেবে আমরা প্রত্যেকেই সচেতন থাকব; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বৃক্ষ রোপণ করে ছেলে-মেয়েদের সামনে দৃষ্টান্ত রাখব।
(৬) মন মানসিকতা পরিষ্কার রাখব প্রথমে নিজে, পরিবারে, সমাজে ও মণ্ডলিতে।
(৭) ধীরে ধীরে মাদকদ্রব্য পরিহার করব । সুন্দর সৃষ্টির জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেব; সবার সঙ্গে সু-সম্পর্ক রাখব ।
(৮) পলিথিন ব্যবহারে সচেতন হব। এর বদলে অন্যকিছু ব্যবহার করব।
(৯) গ্রামে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায়ে রাখলে কোনো পশু দ্বারা কেউ কারো পরিবেশ নষ্ট করবে না।
(১০) সৃষ্টি করার পর ঈশ্বর বিশ্রাম নিয়েছিলেন। আমরাও রবিবার দিন খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করতে আসব এবং গীর্জাঘরে পরিবেশ সুন্দর ও পবিত্র রাখব।
এরপর সকলে একসঙ্গে এক মাণ্ডলিক বিশ্বাসী-সমাজ পরিবেশে খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করেন। খ্রিস্টযাগ শেষে ফাদার প্যাট্রিক দুই ফাদারের নামেই সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং এর পরপরই বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। ফাদার এবং ভক্তজনগণ দুইটি নির্ধারিত জায়গায় বৃক্ষ রোপন করেন। এরপরেই অংশগ্রহণকারীদের মাঝে তাদের নিজ পরিবারে লাগাবার জন্য একটি করে সুপারী গাছের চারা বিতরণ করা হয়। সম্মিলিত আহারের পর সবাই ঘরে ফিরে যায়।
প্রকাশ থাকে যে, স্বাবলম্বী মণ্ডলি হওয়ার প্রচেষ্টাস্বরূপ এই সেমিনারটিতে অংশগ্রহণকারীদের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তথা অনুদানে বাস্তবায়িত করা হয়। এরজন্যে তাঁদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানানো হয়।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার