‘কারিতাস বাংলাদেশ: ভালোবাসা ও সেবায় ৫০ বছরের পথ চলা” এ মূলসুরকে ঘিরে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশ সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল গত ডিসেম্বর ১৫, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ তারিখে পবা উপজেলার আন্ধারকোঠা মিশন প্রাঙ্গণে সুবর্ণ জয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর মধ্যদিয়ে অত্র অঞ্চলে জুবিলী বর্ষের কার্যক্রম শুরু হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব লসমী চাকমা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পবা, রাজশাহী এবং গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশপ জের্ভাস রোজারিও, এসটিডি, ডিডি; বিশপ, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মি. সেবাষ্টিয়ান রোজারিও, নির্বাহী পরিচালক, কারিতাস বাংলাদেশ; রেভা. ফাদার ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও, চ্যাপলেইন ও সদস্য, আঞ্চলিক পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন কমিটি, কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল। এছাড়া অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কারিতাস বাংলাদেশের জিবি ও ইবি বোর্ডের অত্র অঞ্চলের সদস্য-সদস্যা, আঞ্চলিক পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন কমিটির সদস্য-সদস্যা, কারিতাস দিনাজপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মি: রঞ্জন রোজারিও, কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন স্তরের প্রাক্তন ও বর্তমান কর্মকর্তা/কর্মীবৃন্দ, স্থানীয় জন প্রতিনিধি, উন্নয়ন মিত্র, কারিতাসের সহযোগী সমিতির সদস্য-সদস্যা ও জনসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, যুব ও শিশু প্রতিনিধি, মিডিয়া প্রতিনিধি, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি এবং সান্তাল, ওরাঁও, মাহালী ও পাহাড়িয়া কমিউনিটির জনগোষ্ঠী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মি. সুক্লেশ জর্জ কস্তা, আঞ্চলিক পরিচালক, কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল।
পবা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. ওয়াজেদ আলী বলেন, ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে কারিতাস তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান নামে দেশে কাজ শুরু করে জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য কাজ করে চলেছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মানবিক মর্যাদা, শিশু, মজা পুকুর খনন-পুনঃখনন, রাস্তা সংস্কার, মাঠ ভরাট এবং নারী অধিকারের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে সংস্থাটি- কাজ করছে পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব লসমী চাকমা বলেন, বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী ও কারিতাসের সুবর্ণ জয়ন্তী একই সাথে যা খুবই খুশির বিষয়। বিভিন্ন ডিসপ্লে ও স্টলের মাধ্যমে কারিতাস তার ৫০ বছরের উল্লেখযোগ্য অর্জন খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছে যেখানে শিক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কৃষি, জলবায়ু, আদিবাসীদের উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি তাদের সংস্কৃতি সুরক্ষা সুন্দরভাবে ফুটে উঠছে। পরিশেষে তিনি পবা উপজেলা একটি মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার সরকারি পরিকল্পনায় কারিতাসের সম্পৃক্ততা থাকবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের গেস্ট অব অনার রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও, এসটিডি, ডিডি, বলেন, ‘৭১’এর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে যুদ্ধের সময় ও যুদ্ধ পরবর্তী দেশের পুনর্বাসন কাজ থেকে শুরু করে দেশের সমন্বিত উন্নয়নে কারিতাস ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এছাড়া বর্তমানে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল কাজের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উন্নয়ন এবং ভালবাসা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক কাজ করছে। কারিতাসের এই সেবামূলক ভালবাসাপূর্ণ কাজের মধ্যদিয়ে যিশু খ্রিস্টেরই ভালবাসা প্রকাশ পায়।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মি. সেবাষ্টিয়ান রোজারিও বলেন, একই বছরে বিশ্ব কারিতাস ৭০ বছরের জুবিলী উদযাপন করছে এবং বাংলাদেশ কারিতাস করছে ৫০ বছরের জুবিলী উদযাপন । এ জুবিলীর মধ্যদিয়ে তিনি আগামী দিনের কারিতাস কেমন হবে তার মতামত প্রদানের মধ্যদিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, দেশের ২০৪১ খ্রিস্টাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় কেউ যেন পিছনে না পড়ে এবং ধনী ব্যক্তিদের সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে কারিতাসের সেবাকাজে অংশগ্রহণের আহবান জানান। এ জুবিলীতে কারিতাস স্টাফদের নিজস্ব উদ্যোগে দরিদ্রদের গৃহদান ও শিক্ষাবৃত্তি কর্মসূচিতে কারিতাস রাজশাহী উদাহরণ তৈরী করেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।”
অনুষ্ঠানের সভাপতি কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মি. সুক্লেশ জর্জ কস্তা অত্র অঞ্চলের ৫০ বছরের অর্জন ও অবদান তুলে ধরেন এবং যারা কারিতাসে অবদান রেখেছেন তাদের ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ফাদার ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও, চ্যাপ্লেইন এবং আঞ্চলিক মূল্যায়ন ও পরিকল্পনা কমিটির সদস্য কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল; আঞ্চলিক পরিচালক কারিতাস দিনাজপুর অঞ্চল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে ছিল-
কারিতাস বাংলাদেশ- ভালবাসা ও সেবায় ৫০ বছরের পথচলা বিগত ৫ দশকের ঐতিহাসিক, স্মরণীয় ও উল্লেখযোগ্য অর্জন সহভাগিতা, কারিতাসের কার্যক্রমের উপর জীবনসাক্ষ্য প্রদানমূলক সহভাগিতা, দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, বিশেষ মানবিক সহায়তা হিসেবে অসহায় দুঃস্থ গৃহহীনদের মাঝে গৃহ প্রদান এবং জুবিলী স্মারক প্রদান, ইত্যাদি। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ছিল বর্ণাঢ্য র্যালি, আদিবাসী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, গম্ভীরা পরিবেশন ও পুরষ্কার বিতরণ, ইত্যাদি। অতঃপর পরবর্তী উপজেলায় বর্ষব্যাপী জুবিলী উদযাপনের জন্য জুবিলী লগো, থিম সং ও অন্যান্য উপকরণাদী পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলায় হস্তান্তর করা হয়।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : মি: অসীম ডি ক্রুশ