ফাদার সুনীল রোজারিও। বরেন্দ্রদূত প্রতিবেদক
ভূমিকা : প্রতিবারের মতো ২০২১ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী ডাইয়োসিসের বিভিন্ন ধর্মপল্লী, সংগঠন এবং গ্রাম থেকে বড়দিন উপলক্ষে সাময়িকী প্রকাশিত হয়েছে। কিছু সাময়িকী ইতিমধ্যেই বরেন্দ্রদূত দপ্তরে এসে পৌঁছেছে। এবারই সম্ভবত প্রথম খ্রিস্টজ্যোতি মিডিয়া সেন্টার এসব সাময়িকী নিয়ে পর্যালোচনা করার উদ্যোগ নিয়েছে। আজকে এই পর্যলোচনার তৃতীয় পর্ব তুলে ধরা হলো-
বোর্ণী খ্রিস্টান যুব সংঘের মৌসুমীর যাত্রা দীর্ঘকালের। গত ৪৪ বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসছে। আজকের বোর্ণী ধর্মপল্লীর অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখকের উদ্যেগে মৌসুমী আত্মপ্রকাশ করেছিলো। মৌসুমীকে নিয়ে আজো তারা গর্ব করতে পারেন। তবে চলতি সংখ্যাটি নিয়ে একটু হতাশ হতে পারেন। প্রচ্ছদটিতে গোশালার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর মনোগ্রাম এবং নিচে মুক্তিযোদ্ধার হাতে দেশের পতাকা খুবই প্রাসঙ্গিক। তবে কালার কম্বিনেশন একটু কমিয়ে দিলে প্রচ্ছদটি আরো ফুটে উঠতো। এবারের সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হয়েছে ধর্মপল্লীর কৃতি-সন্তান স্বর্গীয় ফাদার বিকাশ হিউবার্ট রিবেরু’র করকমলে।
বড়দিন উপলক্ষে মৌসুমী প্রকাশিত হলেও বড়দিন নিয়ে কোনো লেখা নেই। “পবিত্র বাইবেল ও আমাদের জীবন” শিরোনামে, ফা. দিলীপ এস. কস্তা’র লেখা দিয়ে শুরু হয়েছে মূল পত্রিকা। ফা. দিলীপ বনানী উচ্চ সেমিনারির শিক্ষক এবং ইতিহাসবিদ। তার লেখার স্টাইলটি মনে হতে পারে ক্লাস নোটের মতো। বাইবেলের আদি-অন্ত নিয়ে লেখাটি তাৎপর্যপূর্ণ হলেও সাধারণ পাঠকের জন্য বিষয়টি কঠিন। যোসেফ গমেজ লিখেছেন, “জীবন এবং শিক্ষার খন্ড খন্ড ভাবনা (ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব এবং আচরণ)” নিয়ে। এই লেখাটিও সৃজনশীল, তবে সাধারণ পাঠকের জন্য নয়। “শেষ ট্রেন” গল্পটি ইংরেজি Last Train থেকে অনুবাদ করেছেন ফা. যোহন মিন্টু রায়। এই কাহিনীর সঙ্গে বড়দিনের কোনো সম্পর্ক নেই। তেরেজা তপতী রোজারিও লিখেছেন, “মাদক কেন মাদল” শিরোনামে তুলে ধরেছেন যুব সমাজের একটি ভয়ানক সমস্যার কথা। আজকে মাদক গ্রাম গঞ্জে, সমাজের আনাচে কানাচেও পৌঁছে গেছে। এর থেকে রেহাই পাওয়ার অনেক উপায়ের কথা লেখায় বলা হয়েছে। কানাডা থেকে টমাস রোজারিও লিখেছেন, “শৈশব কিছু স্মৃতির ইতিকতা: অতঃপর” নিয়ে। বড়াল নদের বোর্ণী জনপদে বেড়ে উঠা লেখক তার শৈশবের ফেলে আসা গল্প-কথা বিদেশের মাটিতে বসে এখনো মনে রেখেছেন। শৈশবের সঙ্গে বর্তমান অবস্থান কানাডার কিছু তুলনাও করেছেন। “পরীক্ষা” নিয়ে লিখেছেন, উদয় এ. রোজারিও। ফা. সাগর কোড়াইয়া লিখেছেন “ঘটনার পিছনে ঘটনা হারিয়ে যায়: তবু অনেক ঘটনা প্রশংসার দাবিদার” শিরোনামে। করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে ঘটে যাওয়া অনেক কাহিনী লেখক উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে উল্লেখ করতে ভুলেন নি, ক্ষুদ্র খ্রিস্ট সমাজের মধ্যে দলাদলি, ক্রেডিট ইউনিয়ন নিয়ে ডিস-ক্রেডিট ও যুব সমাজকে পিছনে ফেলে দেওয়ার পিছনের শক্তি কারা। লেখায় সচেতন হওয়ার অনেক খোড়াক আছে। “নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে মোটিভেশন ও পড়াশোনা বিষয়ক মতামত ও পরামর্শ” দিয়েছেন ইউজিন অভিষেক রড্রিক্স। তিনি তার লেখায় ভালো কিছু পরামর্শ রেখেছেন। এই লেখাগুলো ছাড়াও গল্পের আকারে আরো কিছু লিখেছেন, “মা”- ঋতু রোজারিও; “বিসর্জন”- সুকন্যা গনসালভেস; “কিছুক্ষণ”- পূজা কস্তা এবং সবশেষে রয়েছে কবিতাগুচ্ছ।
উপসংহার : পরামর্শ রেখে বলতে পারি- ভবিষ্যতে বড়দিন সংখ্যায় বড়দিন নিয়ে লেখা থাকলে উপযুক্ত মনে হবে। সেই সঙ্গে কিছু লেখা থাকতে হবে সাধারণ পাঠকের জন্যও। বানান ও তথ্য সম্পর্কে আরো সচেতন থাকতে হবে। যেমন- ধরন না ধরণ। ইংরেজি নববর্ষ বলতে কিছু নেই- হবে খ্রিস্টাব্দ। প্রিন্টারস লাইনে মুদ্রণের নাম উল্লেখ নেই। বাংলা একাডেমিকের প্রমিত বাংলা ব্যবহার না করলে তা ভুল হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। লেখক ও পাঠকদের প্রতি রইলো শুভেচ্ছা।