ফাদার সুনীল রোজারিও। বরেন্দ্রদূত প্রতিবেদক

ভূমিকা : প্রতিবারের মতো ২০২১ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী ডাইয়োসিসের বিভিন্ন ধর্মপল্লী, সংগঠন এবং গ্রাম থেকে বড়দিন উপলক্ষে সাময়িকী প্রকাশিত হয়েছে। কিছু সাময়িকী ইতিমধ্যেই বরেন্দ্রদূত দপ্তরে এসে পৌঁছেছে। এবারই সম্ভবত প্রথম খ্রিস্টজ্যোতি মিডিয়া সেন্টার এসব সাময়িকী নিয়ে পর্যালোচনা করার উদ্যোগ নিয়েছে। আজকে এই পর্যালোচনার ৫ম পর্ব তুলে ধরা হলো।

লূর্দের রাণী ধর্মপল্লী, বনপাড়া, হারোয়া, বড়াইগ্রাম, নাটোর থেকে বড়দিন সংখ্যা- ২০২১ খ্রিস্টাব্দের “পরশ” নানা কলেবরে প্রকাশিত হয়েছে। প্রচ্ছদে, মেঘলা আকাশের নিচে মা মারীয়া মণ্ডলিকে আগলে দাঁড়িয়ে আছেন। গোশালার দিকে তিন পন্ডিতের যাত্রা বেশ ভালো হয়েছে। পত্রিকাটি উৎসর্গ করা হয়েছে, বনপাড়া ধর্মপল্লীর প্রাক্তন পাল-পুরোহিত বিকাশ হিউবার্ট রিবেরু’র উদ্দেশ্যে। পত্রিকাটি সম্পাদনা করেছেন, ফা. পিউস গমেজ এবং মুদ্রিত হয়েছে, প্রমি প্রিন্ট লাইন, ঢাকা থেকে।

বনপাড়া ধর্মপল্লীর সন্তান বিশপ জের্ভাস রোজারিও’র লেখা দিয়েই শুরু হয়েছে মূল পত্রিকা। তিনি লিখেছেন, “ধর্মপল্লী পরিচালনা : সেবাকাজ ও বিশ্বাসের সাক্ষ্যদান” শিরোনামে। আধুনিককালের ধর্মপল্লীতে অনেক রকমের সেবাকাজ রয়েছে। তবে ভুললে চলবে না যে, আসল সেবাকাজ হলো, ভক্তের আত্মার যত্ন নেওয়া। সেই সঙ্গে ধর্মপল্লী পরিচালনা শুধুমাত্র যাজকদের কাজ নয়- সবার কাজ। এই ক্ষেত্রে অবশ্যই স্মরণযোগ্য, “আমার ধর্মপল্লী আমার দায়িত্ব” পালকীয় কর্মশালাটি। ফা. দিলীপ এস. কস্তা লিখেছেন, “মিলনধর্মী খ্রিস্টমণ্ডলি ও সিন্ড” শিরোনাম দিয়ে। প্রসঙ্গটি একেবারে সমসাময়িক। সামনের দিনগুলোতে বিষয়টি নিয়ে অনেক অনুধ্যান প্রকাশিত হবে- আশা রাখছি। “পরিবারে পিতাদের আদর্শ সাধু যোসেফ” প্রসঙ্গে লিখেছেন- বনপাড়া ধর্মপল্লীর কৃতি সন্তান ফা. লুইস সুশীল পেরেরা। পবিত্র পরিবারে সাধু যোসেফ যেভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন- তা থেকে অবশ্যই আজকের পিতারা অনুপ্রাণিত হতে পারেন। ড. ফাদার শংকর ডমিনিক গমেজ লিখেছেন, “চলমান করোনা মহামারিতে শিক্ষা ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ ও উত্তরণের পথ” শিরোনাম দিয়ে। ফা. শংকর একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে প্রবন্ধটি তার কাছ থেকে আশা করা আশারই বটে। শিক্ষা বিষয়ে আরো লিখেছেন তুষার পিরিছ “উচ্চ শিক্ষা, দক্ষতা ও আত্মকর্মসংস্থানে স্বপ্ন ও বাস্তবতা” শিরোনাম দিয়ে। বনপাড়া ধর্মপল্লীর প্রয়াত ফাদার বিকাশ হিউবার্ট রিবেরু ছিলেন একজন ভালোবাসার মানুষ। কাকলী রোজারিও “ভালবেসেই সকলের ভালবাসার যাজক প্রয়াত পাল-পুরোহিত ফাদার বিকাশ হিউবার্ট রিবেরু” সম্পর্কে লিখেছেন। ফাদার বিকাশ তাঁর ভালোবাসা ও কর্মগুণেই মানুষের অন্তরে বেঁচে থাকবেন। “যাজকীয় আহ্বান ও গঠন জীবনে ভক্তগণের অংশগ্রহণ” সম্পর্কে লিখেছেন, ফাদার পিউস গমেজ। যাজকীয় জীবন ঈশ্বরের আহ্বান এবং ব্যক্তি জীবনের বিশেষ অনুগ্রহ। সন্তানকে যাজকীয় জীবনে প্রবেশের অনুপ্রেরণাটা আসতে হয় প্রথমে পরিবার থেকে। পরে গঠনগৃহে প্রার্থী ধীরে ধীরে নিজেকে গড়ে তোলেন মণ্ডলির জন্য। সুন্দর লেখার জন্য ফা. পিউসকে ধন্যবাদ। ফা. টিটু ডেভিড গমেজ লিখেছেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিশুদের গঠন” বিষয়ে। শিশুদের গঠন বিষয়ে খুঁটিনাটি খতিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। শিশুরা যে পরিবেশে গড়ে ওঠে, যে শিক্ষা পায়- ভবিষ্যতে তার কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না। পরিবার, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- সবারই দায়িত্ব শিশুদের প্রতি যত্নশীল হওয়া। “শিশুদের যত্ন, অধিকার ও ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের পথ” শিরোনামে লিখেছেন সজীব পিউরীফিকেশন। লেখা দুটি পড়ে উপকৃত না হওয়ার কোনো কারণ নেই। “নেতৃত্ব এবং বিকাশ” নিয়ে লিখেছেন কাজল রোজারিও। ফাদার সাগর কোড়াইয়া লিখেছেন, “জুবিলীর জয়ধ্বনি বাজে” শিরোনামে। ফাদারদের জীবনে এই মুহুর্তগুলো আশির্বাদ। যাজকত্ব একটি কঠিন জীবন। নিজে নিজেকে মূল্যায়ন করার একটি উপযুক্ত সময়। আপনাদের তিনজনকে রৌপ্য জুবিলীর শুভেচ্ছা। মণ্ডলিতে আপনাদের অবদান আরো দীর্ঘ হোক- সেই কামনা করি। ফাদার মিন্টু জের্ভাস রোজারিও, নিউইয়র্ক সিটি থেকে লিখেছেন, “আমার ভাবনা, ভাবনায় আমি” শিরোনাম দিয়ে। আধুনিক প্রযুক্তি, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সমস্যা সমাজেও তৈরি হচ্ছে। এই বিষয়গুলো দার্শনিক ভাবধারায় ফাদার ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেছেন। আলেকজান্ডার কোড়াইয়া লিখেছেন “পাপ ও পুণ্যের পথ” নিয়ে। “বনপাড়া ধর্মপল্লী পরিচালনা, সাংগঠনিক কার্যক্রম ও খ্রিস্টবিশ্বাসের গঠন” শিরোনামে লিখেছেন, রতন পেরেরা। ধর্মপল্লীর প্রতিষ্ঠান ও এ্যাজেন্টগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হলে ধর্মপল্লী স্বাবলম্বী ও জনগণ কল্যাণমুখি হয়ে ওঠে। “খ্রিস্টের দেহধারণ : স্বর্গ থেকে নেমে এলেন গোশালায়” নিয়ে লিখেছেন, উজ্জ্বল সামুয়েল রিবেরু। আর “বড়দিন নিয়ে কিছু কথামালা” সাজিয়েছেন ব্লেইজ সুমিত কস্তা। বড়দিন নিয়ে এই লেখাগুলো পত্রিকার শুরুতে থাকলে ভালো হতো- কারণ পত্রিকাটি প্রকাশ করা হয়েছে বড়দিন উপলক্ষ্যে।

উপসংহার : পরশ পত্রিকায় বৈচিত্রের পরশ থাকলেও বড়দিনের তাৎপর্য নিয়ে আরো কয়েকটি লেখা থাকলে ভালো হতো। প্রমিত বাংলা বানান বিন্যাসের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু অনেক শব্দে ‘ ি, না, ী’ হবে সেদিকে খেয়াল কম ছিলো। যেমন তৈরী- বেশী- খ্রীষ্ট- যীশু নয়; হবে তৈরি- বেশি- খ্রিস্ট- যিশু। লেখাগুলো বিভাগ তৈরি করে সাজালে কেমন হতো ? উদাস পথিকের কবিতা, বাউল যিশুর কবিতা দক্ষিণে মনে হয় খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। লেখকদের প্রতি শুভেচ্ছা।

 

Please follow and like us: