গত ২ এপ্রিল ২০২২ খ্রিস্টাব্দ শনিবার মথুরাপুর ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের দক্ষিণ ভিকারিয়ার সভা। এর মূলসুর ছিল: ‘সিনোডাল চার্চ: মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণ’। সভায় উপস্থিত ছিলেন শ্রদ্ধেয় ফাদার ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও-ভিকার জেনারেল রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ, ফাদার শিশির নাতালে গ্রেগরী- আহ্বায়ক, দক্ষিণ ভিকারিয়া, মি. রতন পেরেরা- সেক্রেটারী দক্ষিণ ভিকারিয়া, ফাদার বাবলু কোড়াইয়া, আহ্বায়ক, পালকীয় সেবাদল, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ, ফাদার দিলীপ এস কস্তা, ফাদার স্বপন পিউরীফিকেশনসহ আরো ৯ জন ফাদার, ১০ জন সিস্টার এবং খ্রিস্টভক্তগণসহ মোট ৭২ জন।
দিনের শুরুতেই ধর্মপল্লীর সহকারী পালপুরোহিত- ফাদার স্বপন পিউরীফিকেশন এর উদ্বোধনী প্রাথর্না, মথুরাপুর ধর্মপল্লীর নৃত্য কন্যাদের নৃত্যের মধ্য দিয়ে সবাইকে বরণ করে নেওয়া হয়। সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার শিশির নাতালে গ্রেগরী। বিগত বছরের প্রতিবেদন পাঠ করেন সেক্রেটারী রতন পেরেরা এবং প্রস্তাব ও সমর্থনের মধ্য দিয়ে উক্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবকের আহ্বান: ‘কৃতজ্ঞ হও’ এই মুলসূরের উপর প্রত্যেক ধর্মপল্লী তাদের পালকীয় পরিকল্পনার মূল্যায়ন ও প্রতিবেদন পেশ করেন।
‘সিনোডাল চার্চ: মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণ’ এর উপর ভিত্তি করে বিশেষ সহভাগিতা করেন ফাদার দিলীপ এস কস্তা। তিনি সিনড্ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘ মণ্ডলির বিশ্বাসের শিক্ষা এবং মণ্ডলির ধর্মীয় নৈতিক বিষয়ক যে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য সভা আয়োজন করা হয় তাকে সিনড্ বলে আর মণ্ডলি আমাদের যে আহ্বান জানায় সেটা হলো মিলন আহ্বান।
সিনোডাল চার্চের যে আহ্বান- মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণ এর উপর ভিত্তি করে প্রত্যেক ধর্মপল্লী কিভাবে তাদের ধর্মপল্লীকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে প্রত্যেক ধর্মপল্লী পর্যায়ক্রমে তাদের উপস্থাপনা তুলে ধরেন। ধর্মপল্লীগুলো হল: বোর্ণী, মথুরাপুর, ফৈলজানা, ভবানিপুর, গোপালপুর, গুল্টা, নাটোর, বগুড়াও বনপাড়া। তারপর ভিকারিয়া ভিত্তিক প্রাক-বিবাহ প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, বছরে একবার ভিকারিয়া পর্যায়ে দক্ষিণ ভিকারিয়ার অর্ন্তভূক্ত যে কোন একটি ধর্মপল্লীতে প্রাক-বিবাহ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে ।’
শ্রদ্ধেয় ফাদার ইম্মানুয়ের কানন রোজারিও একসাথে যাত্রা করার বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি তার বক্তব্যের শুরুতে একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন-আমরা অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তার আমাদের রোগ নির্ণয় করেন। আর এই রোগ নির্ণয় করার পরই কেবল ডাক্তার আমাদের ঔষুধ দিয়ে থাকেন। বর্তমান বাস্তবতার আলোকে পোপ মহোদয়ও সিনোডাল মণ্ডলি বা চার্চ হওয়ার জন্য ডায়গোনোসিস বা রোগ নির্ণয় করেছেন। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতা। আর এই বাস্তবতার ঔষুধ হচ্ছে সিনোডাল চার্চ বা মিলনধর্মী সহযাত্রী মণ্ডলি হওয়া। মানে বিচ্ছিন্নভাবে চলা নয়, বরং একসাথে মিলনাবদ্ধ হয়ে চলা। তিনি একটি আফ্রিকান প্রবাদ বাক্যের উল্লেখ করার মাধ্যমে বলেন “ যদি তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে হয়, তাহলে একা যাও, আর যদি দূরে কোথাও যেতে চাও তাহলে একসঙ্গে যাও।”
সবশেষে, মথুরাপুর ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত এবং দক্ষিণ ভিকারিয়ার আহ্বায়ক ফাদার শিশির নাতালে গ্রেগরী সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে দিনের কর্মসূচীর সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তারপর দুপুর দু’টায় দুপুরের খাবার গ্রহণ করে সকলে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যায়।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার: যুথিকা রোজারিও