গত ০৭ এপ্রিল, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ রোজ বৃহ:স্পতিবার রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ’স হাউজে অনুষ্ঠিত হয় যাজকবর্গের সভা। এতে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপসহ রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে কর্মরত সকল যাজকগণ উপস্থিত ছিলেন। সকাল ৯:০০ টায় প্রার্থনা, বাইবেল পাঠ ও গানের মধ্যদিয়ে যাজকবর্গের অধিবেশন শুরু হয়। দুপুর ১২:৩০ টা পর্যন্ত এ অধিবেশন চলে। বিকাল ৩:০০টায় শুরু হয় যাজকবর্গের জন্যে পুণ্য সপ্তাহের প্রস্তুতিমূলক নির্জন ধ্যান। নির্জন ধ্যানের অনুধ্যান রাখেন শ্রদ্ধেয় ফাদার শিশির নাতালে গ্রেগরী।

বিকাল ৫:০০ টার সময় ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হয় পুণ্য তেল আশীর্বাদের খ্রিস্টযাগ। এতে প্রধান পৌরহিত্য করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও এসটিডি, ডিডি। খ্রিস্টযাগের শুরুতেই তিনি সকল খ্রিস্টভক্তদের আহ্বান জানান যেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে কর্মরত সকল যাজকদের জন্য ভক্তজনেরা প্রার্থনা করেন। কেননা, যাজকরা প্রতিনিয়তই ভক্তজনের সেবাকর্মে এবং তাদের সার্বিক মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করে থাকেন। তাই, আজকের এই দিনে খ্রিস্টভক্তগণও যেন যাজকদের জন্য প্রার্থনা করেন। এছাড়াও তিনি আরো বলেন- যদিও আজ পুণ্য বৃহস্পতিবার নয় কিন্তু আমাদের রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের সুবিধার্থে আমরা পুণ্য বৃহ:স্পতিবারের ঠিক এক সপ্তাহ আগে এই দিবসটি উদযাপন করছি। এই দিনটি গুরুত্বসহকারে উদযাপন করা একটি আবশ্যকীয় প্রথা। আজকের এই খ্রিস্টযাগে আমরা পবিত্র তেল বা পুণ্য তেল আশীর্বাদ করে থাকি। এই তিন প্রকার তেল হল- (১) দীক্ষাস্নানে ব্যবহৃত দীক্ষা প্রার্থীর তেল, (২) অভিষেক তেল বা ক্রিজম তেল; এ তেল ব্যবহৃত হয় দীক্ষাস্নানে, হস্তার্পণে, যাজকবরণে, বেদী ও গীর্জা উৎসর্গ অনুষ্ঠানে এবং (৩) রোগীলেপন সংস্কারে ব্যবহার্য রোগীদের তেল। সাধারণত: পুণ্য বৃহ:স্পতিবার সকালে অভ্যঞ্জন-খ্রিস্টযাগে বিশপ মহোদয় কর্তৃক এই তিন প্রকার তেল আশীর্বাদিত হয়।

বিশপ মহোদয় তাঁর উপদেশে বলেন- ঈশ্বর তাঁর সৃষ্ট নিজের সন্তানদের কখনো ভুলে যান না। তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন অভাব-অনটনে কোন না কোন ভাবে তিনি আমাদের সহবর্তী হন। আমরা মঙ্গলসমাচারে সুন্দরভাবে শুনেছি যে, পিতা যিশুকে যে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন সেটা তিনি যথাযোগ্যভাবে পালন করেছেন। আজকের মঙ্গলসমাচারে যিশু নিজেই যে বাণী পাঠ করেছেন সেখানে বলা আছে- প্রভুর আত্মা আমার উপর নিত্যই অধিষ্ঠিত। তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন বন্দীর কাছে মুক্তির বাণী শুনাতে, যারা ক্ষুধার্ত তাদেরকে খাবার দিতে, যারা কষ্টের মধ্যে আছে তাদের কষ্ট লাঘব করতে, যারা বিভিন্নভাবে সমস্যাগ্রস্থ আছে তাদের সমস্যা নিরসন করতে। তিনি চেয়েছেন পৃথিবীর মানুষদেরকে সত্যিকার অর্থে মুক্তি দিতে। যেকোন ধরনের বন্ধন থেকে মুক্তি দিতে। পাপের দিক থেকেই হোক কিংবা প্রলোভনের মধ্য থেকেই হোক বা অভাব-অনটন ক্ষুধা-পিপাসার অর্থাৎ যেকোন ধরনের মুক্তি সাধন করতেই তিনি এই পৃথিবীতে এসেছেন। ঈশ্বর চান আমরা যেন তার ভালবাসায় থাকি এবং সুখের মধ্যে থাকি। যিশু নিজেই যাজকবরণ সংস্কার স্থাপন করেছেন, আর এই যাজকগণই যিশুর স্থানে থেকে একই কাজ করে যাচ্ছেন। রুটি ও দ্রাক্ষারস উৎসর্গ করে যজ্ঞ নিবেদনের মধ্যদিয়ে প্রতিদিন পরিত্রাণদায়ী কাজ করে যাচ্ছেন।

মি: ফ্রান্সিস সরেন যাজকদের শুভেচ্ছা দিতে গিয়ে বলেন- যাজকগণ তাদের পিতা-মাতা, আত্মীয় স্বজন সবকিছু ত্যাগ করে আমাদের সেবা করার জন্য তাদের জীবন নিবেদন করে থাকেন। তাই, তাদের এই আত্মত্যাগের জন্য আমরা তাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন এবং শ্রদ্ধা জানাই। সেই সাথে আমরা তাদের জন্য প্রার্থনা করব যেন তারা সুন্দরভাবে তাদের এই যাজকীয় সেবাকাজ চালিয়ে যেতে পারেন।

খ্রিস্টযাগের শেষ আশীর্বাদের পর ভিকার জেনারেল শ্রদ্ধেয় ফাদার ইন্মানুয়েল কানন রোজারিও সর্বপ্রথম সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে পরে বিশপ মহোদয়কে, সকল যাজকদেরকে এবং উপস্থিত সকল ব্রাদার-সিস্টার ও খ্রিস্টভক্তদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন- খ্রিস্টভক্তদের নিয়েই যেন যাজকদের আনন্দ। আর যাজকদের নিয়েই যেন খ্রিস্টভক্তদের আনন্দ। আপনাদের হৃদয়ে আমরা আর আমাদের হৃদয়ে আপনারা। আজকের এই যাজক দিবসে আপনারা ভক্তজনেরা আপনাদের যাজকদের জন্য প্রার্থনা করছেন এ জন্য আপনাদের জানাই ধন্যবাদ।

ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীর পালকীয় পরিষদের পক্ষ থেকে প্রথমত বিশপ মহোদয়কে ফুলের মালা এবং সকল যাজককে ফুল দিয়ে যাজক দিবসের শুভেচ্ছা অভিনন্দন জ্ঞাপন করা হয়।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার

Please follow and like us: