ফাদার সুরেশ পিউরীফিকেশন
আজ হল ধর্মপ্রদেশীয় যাজকদের প্রতিপালক সাধুু জন মেরী ভিয়ান্নীর পর্বদিন। ধর্মপ্রদেশীয় যাজকদের প্রতিপালক সাধু জন মেরী ভিয়ান্নী। তিনি বলেন, ‘যাজকত্ব হল যিশু হৃদয়ের ভালবাসা’ একজন যাজক হলেন মনোনীত, অভিষিক্ত ও মনোনীত। সত্যিই তিনি তিনি যাজকদের জন্য এক উজ্জ্বল আদর্শ। প্রতি বছরই ৪ আগস্ট অত্যন্ত তাৎপর্য পূর্ণভাবে সাধু জন মেরী ভিয়ান্নীর পর্বদিবস পালন করা হয়।
যাজকের সমগ্র জীবনই ঐশজনগণের সেবা ও কল্যাণে উৎসর্গকৃত। যাজকত্ব হল ঈশ্বরের একটি বিশেষ আহ্বান ও ঐশদান। যাজক হলেন ঈশ্বরের মনোনীত বিনয়ী বিশ্বস্ত ও পবিত্র সেবক। ঈশ্বরের বিশেষ আর্শিবাদের পাত্র হলেন যাজক। ঈশ্বর খ্রিস্টের যাজকত্বের সহভাাগি ও সেবাকর্মী হিসেবে অভিষিক্ত করেন। যাজকগণ পবিত্র আত্মার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পবিত্র সংস্কারীয় সেবাকর্ম সম্পাদন করেন। ভক্ত বিশ্বাসীর পুরো ভাগে থেকে যাজক আধ্যাত্মিক জীবনের নবায়ন করেন। যাজক খ্রিস্টপ্রসাদ অনুষ্ঠানে ভক্তজনগণের সঙ্গে খ্রিস্ট বলিদানের মধ্য দিয়ে ঐশ্ব জনগণের বলিদান উৎসর্গ করেন। তিনি খ্রিস্টের প্রতিনিধি হিসেবে ভক্তজনগণের আবেদন প্রার্থনা প্রশংসা ও ধন্যবাদের ডালি খ্রিস্টযাগে উৎসর্গ করেন। পালক হিসেবে একজন যাজক ভক্তজনগণের আধ্যাত্মিক যত্ন ও আত্মার প্রশান্তির জন্য নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করেন।
ধর্মপ্রদেশীয় যাজক
ধর্মপ্রদেশীয় যাজক সরাসরি বিশপের অধীনতা স্বীকার করে কৌমার্য জীবন-যাপন করে এবং ধর্মপালের সহযোগী ও সহকারী হিসাবে যাজকীয় সেবা-দাায়িত্বে উদার-উন্মুক্ত থাকেন। ধর্মপ্রদেশীয় যাজক হলেন ঈশ্বরের ভক্তজনগণের জন্য সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গকৃত একজন মানুষ। ভক্তজনগণের সেবার্থেই যাজক নিজেকে নিবেদন করেন নম্রতা ও আনুগত্যের সাথেই, ঠিক মহাযাজক যিশু খ্রিস্টেরই মত। খ্রিস্টের আদর্শ অনুসরণ করেই যাজকগণ ভক্তজনগণের সেবক হয়ে উঠেন। ভক্তজনগণের সাথে যাজকের সম্পর্ক হবে ভ্রাতৃসুলভ, বন্ধুত্বপূর্ণ ও শ্রদ্ধাপূর্ণ। ভক্তজনগণের পালক হিসেবে যাজক শুধু তাদের পরিচালনা করবেন না বরং তাদের সেবক হিসেবেও কাজ করবেন ঠিক যেমনটি খ্রিস্ট যিশু করেছেন। ধর্মপ্রদেশীয় যাজকগণ ভক্তসাধারণের সহযোগিতা পরামর্শ, অভিজ্ঞতা ও দায়িত্বজ্ঞানের মাধ্যমে একটি ধর্মপল্লীকে সুন্দরভাবে পরিচালনা দান করেন। যাজকগণ ভক্তজনগণের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করে তাদের সমর্থন ও সহযোগিতায় পালকীয় কাজ করে থাকে।
সাধু জন মেরী ভিয়ান্নীর যাজকীয় জীবন
সাধু জন মেরী ভিযান্নী যাজক হবার অভিলাষে সেনিরাীতে যোগ দেন । সেমিনারীতে লাটিন ভাষায় পড়াশোনা করার তার জন খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। যাজক হবার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তিনি সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে যাজক পদে অভিষিক্ত হন। আর যাজক হবার পর তিনি পালপুরোহিত হিসেবে দায়িত্ব পাল ফ্রান্সের আর্চ ধর্মপল্লীতে। অজ-পাড়াগাঁয়ের পালক পুরোহিত হয়ে ভিয়ান্নী যেদিন আর্চ ধর্মপল্লীতে এসেছিলেন সেদিন স্বাগতম শুভেচ্ছা জানাবার জন্য একজন ভক্তবিশ্বাসীও উপস্থিত ছিলেন না। থাকার ছোট কক্ষটি ধূলা-বালি-সহ পোকা-মাকড়ের ঘরের বসতি হয়েছিল। সেখানেই ভিয়ান্নীর থাকার ব্যবস্থা হলো, কোন বাবুর্চি বা সাহায্যের লোক ছাড়াই। বুদ্ধি-দীপ্ত ছাত্র হিসেবে খাতায় কোনদিনই ভিয়ান্নী নাম লেখাতে পারেনি। ল্যাটিন ভাষা আয়ত্ব করা তাঁর জন্য কোন কালেই সম্ভব হয়ে উঠেনি। শিক্ষকদের নিকট কোন কালেই ভাল ছাত্র হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেনি। এতে তাঁর দুঃখ হতাশা-নিরাশা ছিল কিনা সেই বিষয়ে আমরা জ্ঞাত নই। তবে একজন পুরোহিত হবার জন্য বিনম্র স্বভাব ও প্রার্থনাময় জীবনে তিনি সর্বদাই বিশ্বস্ত ছিলেন।
জন ভিয়ান্নীর ব্যক্তিগত জীবনের মূল শক্তি ও ভিত্তি ছিল প্রার্থনা। সারাদিন পাপস্বীকার শোনা ও উপদেশ দানের পর তিনি অল্প সময় পেতেন বিশ্রাম নেবার জন্য। আর তিনি বিশ্রামের সময়টুকু কমিয়ে ভোর রাতে গীর্জায় উপস্থিত হতেন প্রার্থনার জন্য। ঘন্টার পর ঘন্টা তিনি নীরব ও মৌন প্রার্থনায় সময় কাটাতেন। নিমগ্ন ধ্যান ও একান্ত মনন প্রার্থনার শক্তিতে তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা পাপস্বীকার শোনার শক্তি পেতেন। আর্চ নগরীর বিভ্রান্তকারী ভক্ত সেবকদের অনেকেই তা লক্ষ্য করে এবং তাদের মন পরিবর্তন করে ও ধর্মপল্লীকে একটি প্রার্থনাশীল সমাজে পরিণত করেন।
সাধু জন মেরী ভিয়ান্নী কঠোর তপস্যা, ত্যাগ ও প্রায়শ্চিত্তের মধ্য দিয়ে তার জীবন অতিবাহিত করতেন। নিত্য দিনের খাবার তালিকায় থাকতো শুধু সিদ্ধ আলু আর ঘুমাতেন তিনি অতি সাধারণ বিছানায়। ত্যাগময় জীবন-যাপনের মাধ্যমেই তিনি জীবনকে পূর্ণ করেছেন ঐশ ভালবাসার আশীষ ধারায়। মানব জীবনে ঐশ গুণাবলী অর্জনের লক্ষ্যে ত্যাগ ও প্রায়শ্চিত্তের যে অনুশীলন দরকার তা তাঁর জীবন সাধনার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। যাজক হিসাবে পাপস্বীকার শোনার ও ব্যক্তিগত উপদেশ প্রদানে ভিয়ান্নী ব্যতিক্রমধর্মী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ব্যক্তিগত পরামর্শ ও নিরাময়ের জন্য জন্য ভিয়ান্নী সবাইকে সময় দিতেন। যাজকীয় জীবনের পালকীয় কাজের পাপস্বীকার সংস্কার প্রদানে তিনি দিব্যগুণের অধিকারী ছিলেন। তাই পাপস্বীকারে লুকানো বা পাপ বা পাপ প্রকাশে সংকোচবোধকারীদের পাপ তিনি বলে দিতে পারতেন। প্রতিদিন পাপস্বীকারের আসনে তিনি প্রায় ১৪ ঘন্টা সময় ব্যয় করতেন।
ধর্মপ্রদেশীয় যাজকদের প্রতিপালক সাধু ভিয়ান্নী
ঈশ্বর তাঁর মহিমা ও প্রশংসার জন্য বেছে নেন অতি ক্ষুদ্র, নগণ্য ব্যক্তিকে। জন মেরী ভিয়ান্নী তাদেরই একজন। যাজকীয় অধ্যয়নের তিনি ছিলেন অতি দুর্বল, কোনমতে পাশ করলেও ল্যাটিনে তিনি বরাবরই আটকে যেতেন। লিয়ন ধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেলের সমর্থনে তিনি যাজক পদে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা আগষ্ট তিনি আর্চ নগরেই মৃত্যুবরণ করেন, ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা জানুয়ারী তাঁকে ধন্যশ্রেণীভুক্ত করা হয় এবং ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে পোপ একাদশ পিউস তাঁকে পালক পুরোহিত তথা: ধর্মপ্রদেশীয় যাজকদের প্রতিপালক হিসাবে ঘোষণা দেন। তারই জীবনাদর্শে ও আধ্যাত্মিকতাকে অনুসরণ, অনুকরণ করার লক্ষ্যে এই বছর বিশেষ জোর দেয়া হচ্ছে। ধর্মপ্রদেশীয় যাজকদের প্রতিপালক সাধু জনমেরীর জীবনাদর্শ প্রত্যেকজন যাজকের পালকীয় কাজের জন্য অনুপ্রেরণা ও শক্তি।