গত ৮-৯ সেপ্টেম্বর, খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রে, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় পারিবারিক পরিষদের ঊদ্যোগে দম্পতি ও সাধারণ খ্রিস্টভক্তদের নিয়ে দুই দিনব্যাপী এক শিক্ষা সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে ধর্মপ্রদেশের বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে প্রায় ১১০ জন অংশগ্রহণকারী অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারে তিনজন অভিজ্ঞ বক্তা পারিবারিক জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের উপস্থাপনা প্রদান করেন।
শ্রদ্ধেয় ফাদার পৌল পিটার কস্তা তার বক্তব্যে বলেন, ‘সুখী দাম্পত্য জীবনের মূল কথা হলো পরস্পরকে জানা ও অনুভব করা।’ এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বর্তমান সময়ের পরিবারের অবকাঠামো, সমস্যা ও চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেন। তার মতে বর্তমানে পারিবারিক জীবনে যে সমস্ত সমস্যাগুলো দেখা যাচ্ছে তা হলো: অর্থনৈতিক সমস্যা, সংলাপ অভাব, সুসম্পর্ক, সহভাগিতার ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব, নেশাগ্রস্থ পরিবার, অবৈধ সম্পর্ক, মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করা, ছলনা করা, সন্তানদের যত্ন ও শাসন না করা, অখ্রিস্টীয় জীবন-যাপন করা, অবৈধভাবে পরিবার গঠন ও বাস করা এবং বিশ্বাসের অভাব। তার মতে চ্যালেঞ্জসমূহ হলো: প্রার্থনা বিহীন পরিবার, অপ্রাপÍ বয়সে বিয়ে করা বা এক সাথে বাস করা, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার বা আসক্তি, অবাধ চলাফেরা করা, বয়স কম হওয়ার কারণে মÐলি বিবাহ আর্শিবাদ প্রদান করে না বিধায় স্বেচ্ছায় অপ্রাপ্ত বয়সে বিবাহ করা, পিতা-মাতার সুশিক্ষা ও শাসনের অভাব, বিবাহ বিচ্ছেদ, যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়া, এক/দুই সন্তান নীতি, চাকুরীর কারণে স্বামী-স্ত্রী দীর্ঘ দিন আলাদা বাস করা, চাকুরীজীবি পরিবার, নেশাগ্রস্থ পরিবার এবং শহরকেন্দ্রিক পরিবার।
তিনি উল্লেখিত সমস্যা ও চ্যালেন্সগুলো থেকে উত্তরণের জন্য যে পরামর্শ রাখেন তা হলো: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, নিয়মিত সংলাপ করতে হবে, সন্তানদের যত্ন ও খ্রিস্টীয় শিক্ষা মানুষ করে তুলতে হবে, খ্রিস্টীয় মূল্যবোধ চর্চা করা। এছাড়াও ৯টি(স) ব্যবহার করে কীভাবে সুন্দর পারবারিক জীবন-যাপন করা যায়; সে বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবারে সময় দিতে হবে, সঙ্গ দিতে হবে, সংলাপ করতে হবে, সহভাগিতা করতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে, সংশোধন করতে হবে, সর্তক করতে হবে, সুশিক্ষা দিতে হবে ও সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে হবে।
মিঃ বেনেডিক্ট মুর্মু বিবাহিত ও পরিবার জীবন বিষয়ে সহভাগিতা করতে গিয়ে বলেন, ‘বর্তমানে অধিকাংশ পরিবারে অশন্তির আগুন জ্বলছে। পরিবারে মতের অমিল, জেদ ও প্রতিযোগিতা বাড়ছে। তাই আমাদেরকে সর্বদা এই তিনটি মনে রেখে পারিবারিক জীবনে এগিয়ে চলতে হবে। ১। Critisim সমালোচনা করব না, ২। Comparision তুলনা করব না ও ৩। Competetion প্রতিদ্বন্দী/প্রতিযোগিতা করব না। সেই সাথে এও মনে রাখতে হবে। আমরা পরস্পরের প্রতি সমান শ্রদ্ধাবোধ রাখব। আমি নয় আমরা এই মনোভাব নিয়ে পারিবারিক জীবনে এগিযে যাব এবং শারিরীক ও মানসিকভাবে নিজেকে বিসর্জন দিব।
ফাদার জ্যোতি এফ. কস্তা সহভাগিতা করেন ‘পরিবারিক ভালোবাসা একটি আহ্বান ও পথ’ এই মূল বিষয়ের উপর। তিনি তার সহভাগিতায় বলেন, ক্রুশ থেকে আমরা ঝরণার মতো প্রতিনিয়ত ঈশ্বরের কৃপা পেয়ে যাচ্ছি। ক্রুশ আমাদের মুক্তির, পরিত্রাণের বিশ্বাসের চিহ্ন। প্রতিটি পরিবারে তিনটি P=Problem আছে। প্রথম পি দিয়ে খুজে বের করতে হবে আমাদের কি কি সমস্যা রয়েছে এবং কোথা থেকে সমস্যা উদ্ভব হয়। দ্বিতীয় P=posibilities অর্থ্যাৎ আমাদের মধ্যে কী কী সম্ভাবনা আছে, এবং তৃতীয় P= promotion তার মানে হলো আমরা কী বিষয়ে উন্নীত করতে পারি।
তিনি আরো বলেন, আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করি প্রথমত: তা নিজের জন্য গ্রহণ করতে হবে। প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের উপস্থিতি অনুভব করা যায়। যিশুর প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। তাই, আমাকে পবিত্র আত্মার দ্বারা চালিত হওয়ার জন্য প্রার্থনা করতে হবে। বিবাহিত জীবনে স্বামী ও স্ত্রী নিজের পরিচয় ভুলে গেলেই বিপদগামী হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। সেই জন্য প্রার্থনার মাধ্যমে ধৈর্য্য রোপন করা। ধৈর্য্যের মধ্য দিয়ে পরিবারে শান্তি আনতে পারি। পরিবার হলো একটি মালার মতো যেখানে সবাইকে একইভাবে চলতে হয় একটি চলন্ত ট্রেনের মতো। তাই পারিবারিক জীবনে তিনটি অপরিহার্য বিষয় হলো : Head মাথা: স্বামী স্ত্রীর মাথা, Heart হৃদয়: স্ত্রী স্বামীর হৃদয়, Health সুস্বাস্থ্য : অর্থাৎ পরিবারকে হতে হবে দেহ+মন+আত্মা সম্পূর্ণরূপে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।
আমাদের পরিবারে রয়েছে Strenth শক্তি, Weakness দুর্বলতা, Opportunity সম্ভাবনা ও Threat ঝুঁকি। সর্বোবিপরি, বলা যায় বিবাহ হচ্ছে একটি আহ্বান এবং আর্শিবাদ যার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সৃষ্টির কাজকে চলমান রাখাই হলো পরিবার জীবনের বিশেষ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : মি: সুশীল টুডু