ড. ফাদার শংকর ডমিনিক গমেজ
অধ্যক্ষ
সেন্ট যোসেফস স্কুল এন্ড কলেজ বনপাড়া

একুশ শতকে কাথলিক স্কুলে প্রধান শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং একজন প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বের উপর স্কুলের সাফল্য নির্ভর করে। তিনি স্কুলে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য এবং উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নেতৃত্ব দেন। তিনি মঙ্গলবাণীর মূল্যবোধে উন্নয়ন করার জন্য স্কুলে অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেন এবং সচেতনতা দান করেন। বাংলাদেশে কাথলিক স্কুলগুলির সফলতা লাভ, প্রধান শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পালনেরই একি একটি প্রমাণ। প্রধান শিক্ষক বহুধর্মীয় প্রেক্ষাপটের মধ্যেও শিক্ষা, প্রশাসনিক ও আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দান করেন। তিনি একটি সুপ্রতিষ্ঠিত স্কুল সংস্কৃতি গড়ে তোলেন এবং পালকীয় সেবাদান, শিক্ষাদান ও নেতৃত্ব দেন।

বাংলাদেশে বহুধর্মীয় প্রেক্ষাপটে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে কাথলিক স্কুলে প্রধান শিক্ষকদের কিছু অন্যান্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তারা সকল কাথলিক এবং অকাথলিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যত্ম নেবার জন্য দায়িত্বশীল নেতা। প্রধান শিক্ষকগণ সবার মধ্যে ভাল সর্ম্পক তৈরী করার জন্য নিবেদিত এবং কাথলিক ও অকাথলিক সবাইকে সুন্দরভাবে পড়াশুনা করার জন্য উৎসাহিত করেন। স্কুলগুলি গড়ে তোলার সাথে সাথে প্রধান শিক্ষক, স্কুলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, নিয়ম-কানুন এবং শৃংক্ষলাবোধ জাগ্রত করার জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের অবগত করেন। প্রধান শিক্ষক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন।

অপর্যাপ্ত সুবিধা, খারাপ অর্থনৈতিক অবস্থা, আর্থ-সামাজিক পরিবেশ এবং বিশ্বায়নের খারাপ প্রভাবের সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাথলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক চ্যালেঞ্জিং কাজগুলি পরিচালনা করেন। স্কুলের সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও উন্নয়ন কাজ বজায় রাখতে হয়। ফলস্বরূপ, বহু-ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে কাথলিক স্কুলগুলির সমস্যাযুক্ত পরিবেশে প্রধান শিক্ষকদের নেতৃত্বের কৌশল ও শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হয়।

কাথলিক স্কুলে প্রধান শিক্ষকগণ তাদরে নিজস্ব র্ধমীয় সমাজ ও সম্প্রদায় দ্বারা নিযুক্ত করা হয়। ফলস্বরূপ, প্রধান শিক্ষকের জবাবদিহিতা  এবং তাদরে নিয়োগরে জন্য স্কুল সম্প্রদায়রে প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। কাথলিক চার্চ সরকারকে দেখায় যে, তারা স্কুলগুলি দক্ষভাবে চালায় কারণ কাথলিক স্কুলগুলির নিবন্ধিত শিক্ষকদের বেতন সরকার কর্তৃক দওেয়া হয়। অতএব, কাথলিক স্কুলগুলি সরকাররে ব্যবস্থাপনা, প্রশাসন ও প্রশাসনরে নির্দেশাবলী, নিয়ম এবং বিধান অনুসরণ করতে হয়; একই সময়, তাদরে কাথলিক স্কুলগুলরি ভিশন, মিশন এবং লক্ষ্যগুলি পূরণ করতে হয়। শিক্ষা  ও শিক্ষার প্রক্রিয়াতে শিক্ষার উন্নতির জন্য স্কুলগুলরি সংস্কার র্বতমানে গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, কাথলিক স্কুলগুলির যোগাযোগ, সাংগঠনিক এবং ব্যবস্থাপনা দক্ষতার ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকদের নেনৃত্বের যোগ্যতার অনেক প্রত্যাশা থাকে। বাংলাদশেরে বর্তমান প্রজন্মরে আজকরে জগতে যে চ্যালঞ্জেগুলি মুখোমুখি হয়। সেগুলির মধ্যে বর্তমানকালরে উন্নয়নশীল স্কুল নেতৃত্ব এবং ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিগুলি অন্যতম। প্রধান শিক্ষককে পরিবর্তনের মাধ্যমে পুরাতন নেতৃত্বের কৌশলকে যুগোপযোগী করে একুশ শতকরে সফলতা অর্জন করতে হয়।

বাংলাদশেে কাথলিক স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকদেরকে বিশ্বায়ন, সকেুলারজিম, প্রথাগত এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নরে গুরুত্বর্পূণ বিষয়গুলি নিয়ে মুখোমুখি হতে হয়। এই সমস্যাগুলো হল চ্যালঞ্জে, যা কাথলিক চার্চের মূল্যবোধগুলি ধ্বংস করে। কাথলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্কুল ব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসন চালাতে হয় এবং সমাজ পরর্বিতনরে সাথে সাথে নের্তৃত্বের কৌশল পরিবর্তন করতে হয়। কাথলিক র্চাচ শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বর্পূণ অবদান রাখে । শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং কাথলিক স্কুল র্কতৃপক্ষ উভয় প্রধান শিক্ষককে দায়ত্বি দেয় যেন তারা বিদ্যালয়টির ভিশন, মিশন এবং লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়ন করে প্রতিষ্ঠান পরচিালনা করে এবং প্রতিষ্ঠানের র্কাযক্রম চলমান রাখে। অতএব, স্কুলে প্রধান শিক্ষকদের নের্তৃত্বের দ্বারা সাফল্যে আসে। ব্যাস (১৯৯০) নের্তৃত্বের র্কমকাণ্ডের কথা বর্ণনা করে বলেন, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচীর অগ্রগতি প্রধান শিক্ষকদের শিক্ষাগত নের্তৃত্বের কৌশলের উপর নর্ভির কর।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায়  দেখা  গেছে যে, প্রধান শিক্ষকদের আলাদাভাবে কাজ করার পরিবর্তে সম্মিলিতভাবে কাজ করলে শিক্ষাক্ষেত্রে এবং প্রশাসনের সাথে সর্ম্পকিত সমস্যার সমাধান করা যায় সহজেই এবং তাদরে অনুসারীদরে অনুপ্রাণিত করে শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের সংস্কৃতি উল্লখেযোগ্যভাবে পরিবর্তন করা যায়। গবষেণায় আরো দেখা যায় যে, সামাজকি সংগঠনকে রূপান্তরিত করার জন্য এবং ইতবিাচক পরিবর্তনের পরিবেশ তৈরীর জন্য নের্তৃত্ব গুরুত্বর্পূণ। কাথলিক স্কুলগুলির প্রধান, নের্তৃত্বকে সক্রিয় করার জন্য এবং দেশপ্রেমী তৈরী করার জন্য এবং নের্তেৃত্বের অনুশীলনে আদর্শ মডলে তৈরীর দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলে এবং বহু-র্ধমীয় প্রেক্ষাপটে নের্তৃত্বের একটি দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।

প্রধান শিক্ষক কাথলিক স্কুলের উদ্দেশ্য পূরণ এবং সুনাম অর্জন করতে গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা পালন করেন । ট্রাভসি (২০০১) বলেন, প্রধান শিক্ষক কাথলিক স্কুলে সাফল্যরে জন্য একটি গুরুত্বর্পূণ ব্যক্তি। প্রধান শিক্ষকের প্রধান দায়িত্ব স্কুলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তত্ত্বাবধান করা। কাথলিক স্কুলে প্রধান শিক্ষক নৈতিক দর্শনের এবং ক্ষমতার দক্ষ ব্যক্তি।  প্রধান শিক্ষকের ভূমকিা হলো স্কুল র্বোড পরচিালনা। স্কুল প্রশাসনে উন্নতির জন্য  বিষয়সমূহ চিহ্নিত করা, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও উদ্দেশ্য র্কাযকর করা । তারা ব্যবস্থাপনা, র্কম জীবন, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষণ ও শেখা, র্কতৃত্ব এবং যোগাযোগরে জন্য বেঞ্চমার্ক। প্রধান শিক্ষক  শিক্ষা নীতি বাস্তবায়ন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, আর্থিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, বিপণন , তালিকাভুক্তি ব্যবস্থাপনা এবং সর্ম্পক স্থাপন করেন। তিনি নের্তৃত্ব অনুশীলন, স্কুল উন্নয়ন এবং ফলাফল ভাল করার জন্য গুরুত্বর্পূণ ভূমকিা পালন করনে।

বুশ ও জ্যাকসন (২০০২) বলনে, স্কুল কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে প্রধান শিক্ষক সবচেয়ে গুরুত্বর্পূণ ভূমকিা পালন করনে। প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ফলাফলের  ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটান (ফিনগান ও স্টুয়ার্ড, ২০০৯)। হলিঙ্গার (২০০৫) ব্যাখ্যা করনে, প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বের কৌশল এবং উন্নতি বিকাশ করনে।

প্রধান শিক্ষকদরে সক্রিয় অংশগ্রহণে শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বের উপর একটি বড় প্রভাব পড়ে। প্রধান শিক্ষক সাংগঠনিক ক্ষমতা নির্মাণে মনোযোগ দেন এবং ইতবিাচকভাবে শিক্ষার্থীদের সাফল্য প্রভাবিত করনে। তিনি স্কুল উন্নয়ন এবং ছাত্রদরে সাফল্যরে একটি প্রধান ভূমকিা পালন করনে।
কাথলিক স্কুলে প্রধান শিক্ষক খ্রিস্টীয় মূল্যবোধ অনুশীলন করনে। তারা তাদরে ভিশন, মিশন এবং স্কুলের নীতিমালাসহ লক্ষ্য পূরণ করেন। বহু-র্ধমীয় প্রক্ষোপটে তিনি স্কুলে অনন্য নতেৃত্বরে বশৈষ্ট্যি গড়ে তোলেন। অনন্য নতেৃত্বরে বশৈষ্ট্যিগুলি হল রূপান্তরমূলক ও সেবামূলক নতেৃত্ব । প্রধান শিক্ষক লক্ষ্য র্অজন করতে শিক্ষাকর্মী,দের পিতা-মাতা, শিক্ষার্থী ও সমাজরে সদস্যদরে মিলিত করতে সক্ষম হন। তিনি চ্যালঞ্জে মোকাবলো করার জন্য বিশ্বাসের অভজ্ঞিতা ব্যবহার করনে। তিনি স্কুলে প্রোগ্রামগুলরি মাধ্যমে নৈতিক, র্ধমীয় ও আধ্যাত্মকি গঠনরে পাশাপাশি টিমওয়ার্ক এবং ঊৎসাহ দ্বারা চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলি মোকাবিলা করনে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি তার পদে অভ্যন্তরীণ ও বহর্মিুখী সমস্যার সম্মুখীন হন। অভ্যন্তরীণভাব, প্রধান শিক্ষক যে সমস্ত চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলির সম্মুখীন হনঃ বিশ্বাস গঠন, সীমিত অর্থ এবং একাডমেকি চাপ। বহর্মিুখীভাবেঃ রাজনীত, বিশ্বায়ন, বিজ্ঞান এবং তথ্য প্রযুক্তি প্রধান শিক্ষকের কাজ আরও কঠিন করে তোলে। অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বে প্রধান শিক্ষক দক্ষতার সাথে তার স্কুল পরিচালনা করেন এবং স্কুলের সাফল্য বয়ে নিয়ে আসেন।

 

Please follow and like us: