গত ২২ মার্চ ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী বিশপ ভবনে বিশপ জের্ভাস রোজারিও’র ১৬তম বিশপীয় অভিষেক বার্ষিকী উদযাপন করা হয়। এতে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের শহরের ও তার আশে-পাশের বিভিন্ন ধর্মপল্লী, কনভেন্ট ও প্রতিষ্ঠান থেকে ফাদার, ব্রাদার, সিস্টার ও খ্রিস্টভক্তগণ অংশগ্রহণ করেন। সন্ধ্যা ৬.০০ টায় পবিত্র খ্রিস্টযাগের মধ্যদিয়ে পরম শ্রদ্ধেয় বিশপের জীবনের জন্য ঈশ্বরের নিকট ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করা হয়। পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও।

বিশপ মহোদয় তার উপদেশে বলেন- খ্রিস্টেতে প্রিয়জনেরা, আজকের এই মাত্র যেই পাঠগুলো আমরা শুনেছি; মনে হচ্ছে যেন তা আমার আজকের এই বিশপীয় অভিষেক বার্ষিকীর উপলক্ষ্যেই উপযুক্ত। ঈশ্বর আমাদেরকে তার কাজের জন্য বেঁছে নেন বা মনোনীত করেন। ঈশ্বর এমনি এমনি আমাদেরকে বা কাউকে মনোনীত করেন না; মনোনীত করেন বা বেঁছে নেন তার ঐশরাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য একজন সেবাকর্মীরূপে। আমাকে বেঁছে নিয়ে কেন মনোনীত করা হয়েছে? যেন যারা অসহায়, ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে আছে তাদেরকে ঈশ্বরমুখী করে তুলতে পারি। কেউ যেন কোন কষ্ট না পায়, কোন যন্ত্রণা না পায় তাদেরকে লালন পালন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি যখন চিন্তা করছিলাম যে, ঈশ্বর আমাকে নিযুক্ত করেছেন মানে ঈশ্বর আমাকে তার স্থানে রেখে দিয়েছেন অর্থাৎ যিশু যা করতেন আমাকেও যিশুর হয়ে তা করতে বলা হচ্ছে। তার মানে হলো- আমার মধ্যদিয়ে স্বয়ং যিশু উপস্থিত আছেন। যা যিশুর কাজ তা এখন হবে আমার কাজ অন্যথায় আমরা যিশুর কথা শুনব এবং অন্য মানুষের দায়িত্বের কথা ভাববো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমি কতটুকু সফলকাম হচ্ছি! হয়তোবা কোন কাজে সফল হচ্ছি আবার কোন কাজে পুরোপুরি সফলতা আসছেও না। তাই, ঈশ্বরের কাছে প্রশ্ন রাখি ঈশ্বর কি আমার কাজের সফলতা দেখতে চান? না, আমি কতটুকু বিশ্বস্ততার সাথে দায়িত্ব পালনে চেষ্টা করছি সেটা দেখতে চান? আমার মনে হয়, ঈশ্বর আমার সফলতা নয় বরং দায়িত্ব পালনের বিশ্বস্ততাই বেশী করে দেখতে চান। তাই, প্রার্থনা করি যেন আমরা যে যেখানে যে কর্মস্থানে বা সেবা প্রতিষ্ঠানে রয়েছি আমরা যেন বিশ্বস্ততার সাথে শতভাগ কাজ করার সদিচ্ছা নিয়ে আমাদের জীবন পথে এগিয়ে যেতে পারি।

পরিবারকে ছাড়া আমরা বিশপকে পেতে পারি না। আমরা যাজক বা ব্রতধারি-ব্রতধারিনী হতে পারি না। বিশপ মহোদয় তিনি একইভাবে পরিবার থেকে এসেছেন। আজকের এই দিনে আমরা তার বাবা-মাকে স্মরণ করি। তাদের সুন্দর শিক্ষায় আদর্শে তিনি যাজক হবার অনেক প্রেরণা পেয়েছিলেন আর আজকে আমরা খ্রিস্টযাগে স্মরণ করেছি এবং স্মরণ করব যেন বিশপ মহোদয়ের পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন যারা পরলোকগত হয়েছেন তারা যেন স্বর্গীয় সুখ শান্তি লাভ করতে পারে এমনটি বলছিলেন বিশপীয় অভিষেক বার্ষিকী অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ফাদার প্রেমু রোজারিও, চ্যান্সেলর, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ।

ভিকার জেনারেল ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডী বলেন – আমরা খ্রিস্টযাগে শুনেছি ২০০৫ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত প্রথম ২ বছর প্রশাসক হিসেবে এবং পরবর্তীতে বিশপীয় অভিষেক লাভ করার পর বিশপ হিসেবে আমাদের কাছে তার সেবার কাজ, ভালোবাসার কাজ আর সকলকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার কাজ খ্রিস্টমণ্ডলি/স্থানীয় মণ্ডলি গড়ার কাজ তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা অত্যন্ত খুশি এবং ভাগ্যবান এমন একজন বিশপ আমাদের মাঝে পেয়েছি। যিনি ধর্মপ্রদেশের সকলের কথা চিন্তা করেন এবং ধর্মপ্রদেশের উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনারা প্রার্থনা করছেন, প্রার্থনা করে যাবেন এবং আমরা বাকী যতদিন আমরা তাকে পাবো সুস্বাস্থে থেকে তিনি যেন আমাদের সকলকে সেবা করতে পারেন ভালোবাসা নিয়ে এ ধর্মপ্রদেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন এ বিশেষ দিনে ধর্মপ্রদেশের সকলের হয়ে আমি আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ মহোদয়কে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মি: ডেভিড হেম্ব্রম (ডেজিগনেট) বলেন – পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ মহোদয় আমাদের সকলের জন্য ঈশ্বরের দেয়া এক বিশেষ অনুগ্রহের চিহ্নস্বরূপ। আজকের এই ১৬তম বিশপীয় অভিষেক বার্ষিকী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি গর্বিত। আমি গর্ব অনুভব করি এই কারণেই যে, আমাদের বিশপ জের্ভাস রোজারিও খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তার বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে খুব দ্রুত ডায়োসিসের সার্বিক বিষয়ে লক্ষণীয় কাজ সাধন করেছেন। তিনি আরো বলেন- একজন কারিতাস কর্মী হিসেবে আজ আমি খুবই গর্বিত এই জন্য যে, আপনি আমাদের উন্নয়নমূলক সকল কর্মকান্ডে পাশে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দান করে যাচ্ছেন। আমরা প্রার্থনা করি যেন, আগামী দিনগুলিতেও আমরা যেন সফল ভাবে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে যেতে পারি সেজন্য আমাদেরকে আপনার যোগ্য নেতৃত্ব দান করবেন এবং আমরাও আপনার পাশাপাশি থেকে আপনার পরিকল্পিত কার্যক্রমগুলো চালিয়ে নিতে পারেন সেজন্য আপনার হাত শক্ত করতে পারি এবং আপনার স্বপ্নগুলো পূরণে আপনার সাথে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে পারি। ঈশ^র আপনার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করুন।

অত:পর সান্ধ্যভোজের মধ্যদিয়ে বিশপ মহোদয়ের অভিষেক বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানের সমাপ্ত হয়।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : ফাদার বাবলু কোড়াইয়া

Please follow and like us: