গত ২২অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, রোজ রবিবার মারীয়াবাদ ধর্মপল্লী, বোর্ণীতে প্রথম পাপস্বীকার ও খ্রিস্টপ্রসাদ সংস্কার প্রদান করা হয়। দীর্ঘ দিন ধর্ম ক্লাশের মধ্য দিয়ে প্রস্তুতির পর বোর্ণী ধর্মপল্লীর বিভিন্ন গ্রামের ৪৪ জন ছেলে ও ৪৬ জন মেয়ে মোট ৯০ জন ছেলে-মেয়ে প্রথম পাপস্বীকার ও খ্রিস্টপ্রসাদ সংস্কার গ্রহণ করে। তবে উল্লেখ্য যে, আগের দিন ২১ অক্টোবর শনিবার প্রার্থী ও পিতা-মাতাসহ সকলেই পাপস্বীকার সংস্কার গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে প্রস্তুতি নেয়। সহার্পিত খ্রিস্টযাগে পৌরহিত্য করেন ধর্মপ্রদেশীয় পালকীয় কেন্দ্রের পরিচালক ফাদার বাবলু কর্ণেলিউস কোড়াইয়া। খ্রিস্টযাগে আরও উপস্থিত ছিলেন পাল-পুরোহিত ফাদার সুশান্ত ডি’কস্তা, চ্যান্সেলর ফাদার প্রেমু রোজারিও, ফাদার লিটন কস্তা, ফাদার শ্যামল গমেজ এবং সহ-পুরোহিতদ্বয় ফাদার যোহন মিন্টু রায় ও ফাদার অনিল মারান্ডী।
সকাল ৯:০০ ঘটিকায় গির্জার পেছন থেকে শোভাযাত্রা করে খ্রিস্টযাগ শুরু হয়। সহার্পিত খ্রিস্টযাগে পৌরহিত্য করেন ফাদার বাবলু কর্ণেলিউস কোড়াইয়া। খ্রিস্টযাগের উপদেশে ফাদার বাবলু কর্ণেলিউস কোড়াইয়া বলেন, “ যে রাত্রিতে প্রভু যিশু খ্রিস্ট শত্রু হস্তে সমর্পিত হলেন, সেই রাত্রে অন্তিম ভোজে বসে, আমাদের ত্রাণকর্তা তাঁর দেহ ও রক্তের খ্রিস্টপ্রসাদীয় যজ্ঞবলি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি এরূপ করেছেন যাতে তাঁর ক্রুশের বলিদান, যুগে যুগে, তাঁর পুনরাগমন পর্যন্ত, অব্যাহত থাকে, এবং এভাবে তাঁর প্রিয় বধূ, খ্রিস্টমণ্ডলির হাতে যেন ন্যস্ত করা হয় তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের স্মৃতি, অর্থাৎ: প্রেমের সংস্কার, ঐক্যের চিহ্ন, ভালবাসার বন্ধন, নিস্তার মহাভোজ, ‘যেখানে খ্রিস্টকে গ্রহণ করা হয়, হৃদয়মন প্রসাদে পূর্ণ হয়, এবং ভাবী গৌরবের অঙ্গীকার আমাদের দেয়া হয়।”
“খ্রিস্টপ্রসাদ হল ঐশ জীবনের সঙ্গে সেই সংযোগ এবং ঐশজনগণের মধ্যকার সেই একাত্মতার ফলপ্রসূ চিহ্ন ও সর্বোত্তম কারণ, যার দ্বারা খ্রিস্টমণ্ডলি অস্তিত্বে বহাল রয়েছে। এ হল একদিকে খ্রিস্টের মাধ্যমে জগতকে পবিত্রীকরণের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের কাজের, আবার অন্যদিকে মানুষের পূজোপাসনা খ্রিস্টের কাছে, এবং তাঁরই মাধ্যমে. পবিত্র আত্মার সংযোগে, পিতার নিকট নিবেদনের শীর্ষ-প্রকাশ।”
ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার সুশান্ত ডি’কস্তা বলেন, “আজ বোর্ণী ধর্মপল্লীর জন্য একটি অতি আনন্দের দিন। আজ এ ধর্মপল্লীর ৪৪ জন ছেলে ও ৪৬ জন মেয়ে সর্বমোট ৯০ জন ছেলে-মেয়ে প্রথমবারের মত খ্রিস্টপ্রসাদ গ্রহণ করেছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে খুবই আনন্দিত ও খুশি হয়েছি যে, আমাদের ছেলেমেয়েরা দীর্ঘ প্রস্তুতির পর আজ তারা খ্রিস্টকে প্রসাদরূপে নিজেদের অন্তরে গ্রহণ করতে পেরেছে। তাদের সাথে ও তাদের পরিবার-পরিজনদের সাথে আমরাও ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই এবং তাদের আনন্দের সহভাগী। যারা প্রস্তুতিতে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেছেন তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুণ”।
একজন প্রার্থীর অভিভাবক লিভা গমেজ বলেন, “আমার ছেলে প্রথমবারের মত খ্রিস্টপ্রসাদ গ্রহণ করেছে, তাই আমার অনেক ভালো লাগছে যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। তবে ঈশ্বরকে অনেক ধন্যবাদ জানাই যে, আমার ছেলে সুস্থ শরীরে খ্রিস্টপ্রসাদ গ্রহণ করতে পেরেছে। ”
এক প্রার্থী অর্চনা গ্রেগরী বলেন, “ আমার অনেক ইচ্ছা ছিল যে, খ্রিস্টপ্রসাদ গ্রহণ করবো। আজ আমি খ্রিস্টপ্রসাদ গ্রহণ করেছি তাই খুবই ভালো লাগছে ও আনন্দ লাগছে”।
একজন প্রার্থীর জনৈক পিতা বলেন, ‘ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ও ফাদারগণ জোর দিয়ে বলায় এবং আমার মেয়ের অনেক ইচ্ছা ও অনুরোধের কারণে আমি খ্রিস্টপ্রসাদ গ্রহণের পূর্বের দিন পাপস্বীকার সাক্রামেন্ত গ্রহণ করেছি দীর্ঘ ১৮ বছর পর। ঈশ্বরকে ও আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই এমন একটি সুযোগ দানের জন্য। এখন থেকে আমি নিয়মিত পাপস্বীকার ও খ্রিস্টপ্রসাদ সংস্কার গ্রহণের চেষ্টা করবো। আমি সত্যিই আনন্দিত।’
খ্রিস্টযাগের পর প্রার্থীদের প্রথম খ্রিস্টপ্রসাদের সার্টিফিকেট ও মালাসহ ক্রুশ প্রদান করেন পাল-পুরোহিত ফাদার সুশান্ত ডি’ কস্তা, ফাদার বাবলু কোড়াইয়া এবং চ্যান্সেলর ফাদার প্রেমু রোজারিও। এরপর দলীয় ছবি নেওয়া হয় এবং জলযোগের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : ফাদার যোহন মিন্টু রায় ও ফাদার অনিল মারাণ্ডী, বোর্ণী ধর্মপল্লী