দূতগণের রাণী মারীয়া নির্মল হৃদয়ের কাটেখ্রিস্ট সন্ন্যাস সংঘের সিস্টারদের সূবর্ণ ও রজত জয়ন্তী উদযাপন। এ দিনটি ঈশ্বরের পরিকল্পনায় সংঘের ১৩জন ভগ্নীর জীবনের জন্য একটি স্মরণীয় ও আশীর্বাদের দিন।
গত ২৭ অক্টোবর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, দিনাজপুর সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীতে দূতগণের রাণী মারীয়ার নির্মল হৃদয়ের কাটেখ্রিস্ট সন্ন্যাস সংঘের সিস্টারদের সন্ন্যাস জীবনের সূবর্ণ ও রজত জয়ন্তী উৎসব উদযাপন করা হয় ।
এ দিনটি ঈশ্বরের পরিকল্পনায় সংঘের ১৩জন ভগ্নীর জীবনের জন্য একটি স্মরণীয় ও আশীর্বাদের দিন। এই দিনে সন্ন্যাস জীবনের সুদীর্ঘ ৫০ বছরের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করেন সিস্টার ম্যাগডেলিন কস্তা, সিস্টার অলিভিয়া লাকড়া ও সিস্টার ফিলোমিনা রিবেরু, সিআইসি।
সেই সাথে আরো ১০ জন ভগ্নি সিস্টার স্মৃতি ক্যাথরিন বাস্কে, সিস্টার রাণী রেজিনা সরেন, সিস্টার জয়ন্তী মার্গারেট রিবেরু, সিস্টার বার্ণাডেট শিউলী গমেজ, সিস্টার দিপালী রিবেরু, সিস্টার গীর্জামনি শোভা দাস, সিস্টার লিলি দাস, সিস্টার এপিফানিয়া মার্ডী, সিস্টার বিথিকা কারমেলা মোদক ও সিস্টার মেরী পারুল কস্তা সআইসি ২৫ বছর খ্রিস্টযিশুতে বিশ্বস্ত থেকে তাঁর অতিন্দ্রিয় ভার্যা হিসেবে খ্রিস্টের সাক্ষ্য বহনে রজত জয়ন্তীর জুবিলী পালন করেন।
এই মহতি অনুষ্ঠানে পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন দিনাজপুর ধর্মপ্রদেশের বিশপ সোবাষ্টিয়ান টুডু এবং উপদেশ বাণী রাখেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও।
বিশপ জের্ভাস রোজারিও বলেন, “জুবিলী মানেই হলো ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো। নতুন করে জীবনের শুরুর প্রথম দিন এবং একই সাথে জীবনের মূল্যায়নের দিন। ঈশ্বর আমাদের কোন বিশেষ গুণের জন্য আহ্বান করেন না, তিনি আমাদের ভালবাসেন তাই তিনি তাঁর কাজের জন্য আমাদের আহ্বান করেন।”
“ঈশ্বরই আমাদের প্রথম ভালবেসেছেন তাই তাঁর ভালবাসা আমাদের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে,” বলেন বিশপ জের্ভাস রোজারিও।
তিনি আরো বলেন, “ব্রতীয় জীবনের সৌন্দর্য প্রকাশিত হয় অন্তরের সৌন্দর্য থেকে। সন্ন্যাস জীবন-পথ সব সময়ের জন্য সরল নয়। হাসি-বেদনার মধ্যদিয়ে তাকে এগিয়ে যেতে হয়। মাঝে-মধ্যে মনে হতে পারে ‘বৃথাই জীবন’। কিন্তু ঈশ্বরের রাজ্যে যারা নিবেদিতা, জীবনের হাসি-কান্নার পরে তাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকে ‘আনন্দ’। জীবন সুখের হয় তখনই, যখন কেউ দুঃখকে জয় করতে পারেন।”
সন্ন্যাস জীবনে সুবর্ণ ও রজত জয়ন্তী পালনকারী সিস্টারগণ তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “আসলে ঈশ্বর প্রতিনিয়ত তাঁর ভালবাসা প্রকাশ করে যাচ্ছেন তাদের জীবনের মধ্য দিয়ে। তারা প্রত্যেকেই উপলব্ধি করছে ঈশ্বর দয়ালু ও প্রেমময়।”
সংঘের সুপিরিয়র জেনারেল সিস্টার বীণা রোজারিও, সিআইসি বলেন, “আজ আমাদের শান্তি রাণী সংঘের জন্য এক বিশেষ আনন্দের ও আশীর্বাদের দিন। একইসাথে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোর দিন। কেননা ত্যাগ ও সেবার জীবন ভালবেসে আজ থেকে ২৫ বছর পূর্বে ১০ জন বোন ও ৫০ বছর পূর্বে যে ৩ জন বোন যিশুর নিকট জীবন নিবেদন করেছিলেন। আর আজ তারা অতি আনন্দের সাথে কৃতজ্ঞতার অর্ঘডালা সাজিয়ে মণ্ডলির সামনে প্রভুর বেদীমূলে উপস্থিত হয়েছেন সূবর্ণ ও রজত জয়ন্তী উৎসব পালন করতে।”
তিনি আরো বলেন, “এই ২৫ ও ৫০ টি বছরে তারা যেমন ঈশ্বরের অসীম অনুগ্রহ লাভ করেছেন, তেমনি তাদের ত্যাগ সাধনা ও সেবার মধ্যদিয়ে সংঘ ও মণ্ডলি হয়েছে সমৃদ্ধ। তাই এই ১৩ জন বোনকে ঘিরে আমাদের সংঘের প্রত্যেক বোনের হৃদয় আজ প্রভুর জয়গানে মুখর।”
এখানে উল্লেখ্য যে, তিন জন সূবর্ণ জয়ন্তী পালনকারী সিস্টারগণ ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ ১ম সন্ন্যাসব্রত, ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দ আজীবনের জন্য সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ নিজেকে যিশুর চরণে সঁপে দিয়ে ১ অক্টোবর ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ রজত জয়ন্তী উৎসব পালন করে আজ সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে আনন্দিত মনে ঈশ্বরের প্রশংসা গানে মূখর হয়েছেন।
আর একই সাথে ১০ জন বোন ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ, ১ম সন্ন্যাসব্রত এবং ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ, আজীবনের জন্য নিজেদের যিশুর চরণে নিবেদন করে একে একে সুদীর্ঘ ২৫টি বছর বিশ্বস্ততার সাথে মণ্ডলিতে সেবা দান করেছে এবং আজ তারা অতি আনন্দের সাথে রজত জয়ন্তী পালন করছে।
দূতগণের রাণী মারীয়া নির্মল হৃদয়ের কাটেখ্রিস্ট সন্ন্যাস সংঘটি ৭২ বছর পূর্বে বাংলার উত্তর বঙ্গের মাটিতে তাদের পথ চলা শুরু করেছিলেন। আজ তা ফুলে ফলে বিশাল বৃক্ষরূপে পরিণত হয়েছে। দূরদর্শী বিশপ যোসেফ অবেট, পিমে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ ৩০ এপ্রিল মাত্র ১১টি মুক্তদানা স্বযত্নে মনিহারটি গেথে রেখেছিল ৭২ বছরে আজ সেখানে ১৬৪টি মুক্তদানা সংযোজিত হয়েছে। বিস্তার লাভ করেছে দিনাজপুর, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা এবং ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশে। বর্তমানে এই সংঘের ১৬৪ জন সিস্টারের মধ্যে ১৩ জন সিস্টার রজত ও সুবর্ণ জয়ন্তী’র উৎসবের এই মাহেন্দ্রক্ষণে একত্রে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এই জুবিলী অনুষ্ঠানে ২জন বিশপ, প্রায় ৪৫জন যাজক, ২ জন ডিকন, প্রায় ১০৫জন সিস্টারসহ ব্রাদার এবং উৎসব উদযাপনকারীদের আত্মীয়-স্বজন এবং খ্রিস্টভক্তগণ উপস্থিত ছিলেন।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার