– ডানিয়েল লর্ড রোজারিও
“ক্ষমার বাণী, ক্ষমার বাণী
বিশ্বত্রাতা মহাপ্রভুর প্রেম ক্ষমার বাণী।”
“আর যখন দাঁড়িয়ে তোমরা প্রার্থনা কর, তখন কারও বিরুদ্ধে যদি তোমাদের কোন অভিযোগ থাকে, তাহলে তাকে কিন্তু ক্ষমাই কর, যাতে স্বর্গে বিরাজমান তোমাদের পিতাও তোমাদের নিজেদের অপরাধ ক্ষমা করেন “( মার্ক ১২:২৫)। ক্ষমা করা অথবা ক্ষমা চাওয়া অনেক কঠিন একটি কাজ বলে আমরা মনে করে থাকি। বর্তমান সময়ে আমরা একে অপরকে খুব সহজে ক্ষমা করতে পারি না কারন আমরা দিনে দিনে কঠোর হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখুন ঈশ্বর আমাদের প্রতিনিয়ত ক্ষমা করেন। আমাদের পরিত্রাণের জন্য তার পুত্র যিশুখ্রিস্টকে জগতে প্রেরণ করেছেন। তিনি আমাদের কাছে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ক্রুশের উপরে মৃত্যুর আগে আমাদের সকল পাপ তিনি ক্ষমা করেছেন। কিন্তু আমরা সামান্য বিষয় নিয়ে কত মনোমালিন্য, রেষারেষি, ঈর্ষা করি। একবার এক অবসরপ্রাপ্ত বিশপ মহোদয়কে এক যুবক তার ব্যক্তিগত সহভাগিতায় প্রশ্ন করলেন,” বিশপ মহোদয় একজন আমার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছে, সে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে আসলেও আমি তাকে ক্ষমা করতে পারি না। সে আমার কাছে অনেকবার ক্ষমা চেয়েছে কিন্তু আমি তাকে ক্ষমা করতে পারিনি। তাহলে এখন আমি কি করব? “বিশপ মহোদয় তাকে উত্তর দিলেন,” তুমি যদি তাকে ক্ষমা করতে না পার তাহলে তুমি বরং ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চাও এবং বলো পিতা তুমি আমাকে সর্বদা ক্ষমা করো কিন্তু আমি অন্যজনকে ক্ষমা করতে পারছি না তাই তুমিই আমাকে ক্ষমা করো”। লোকটি তার ভুল বুঝতে পারল এবং ফিরে গিয়ে সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করল। আমরাও আমাদের ব্যক্তিজীবনে তেমনি অন্যকে ক্ষমা করতে পারি না।প্রায়শ্চিত্তকাল হলো যিশুর কাছে ফিরে আসার সময় এবং তার কাছাকাছি বাস করা। এসময় আমরা বিশেষ ভাবে তিনটি জিনিস বেশি স্মরণ করি আর তা হলো প্রার্থনা, উপবাস ও দান। প্রার্থনা হলো আত্মার খাদ্য যা আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে পরিপুষ্ট করে। উপবাস এর আক্ষরিক অর্থ হলো কাছাকাছি থাকা।উপবাস মানে শুধু একবেলা না খেয়ে থাকা নয়, আমাদের মন্দ অভ্যাসগুলো এবং আসক্তি ত্যাগ করাই হলো প্রকৃত উপবাস। অন্যদিকে আমাদের কষ্টের ও ত্যাগস্বীকারের অংশটুকু গরীব- দুঃখী মানুষকে দেওয়াই হলো দান। আর এ সবকিছু তখনই সার্থক হবে যখন আমরা নম্র হতে পারব। ক্ষমা হলো নম্রতাম প্রধান হাতিয়ার।
ক্ষমা করার ফলে আপনার ভিতরে আপনি-
১. প্রশান্তি অনুভব করবেন।
২. নিজেকে পবিত্র ভাবতে পারবেন।
৩. কাজে- কর্মে মনোনিবেশ করতে পারবেন।
৪. জীবনে চলতে তেমন কোন সমস্যা হবে না।
৫. নিজেকে যিশুর প্রকৃত শিষ্য বলে পরিচয় দিতে পারবেন।
৬. ঈশ্বরের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারবেন।
৭. নিজের অযোগ্যতা থাকা সত্বেও আপনার প্রতিপক্ষের সাথে সুন্দরভাবে কাজ করতে পারবেন।
৮. একজন আদর্শ খ্রিস্টান হিসেবে সাক্ষ্য বহন করবেন।
খ্রিস্টধর্ম হলো ক্ষমার ধর্ম। মণ্ডলি আমাদের শিক্ষা দেয় সকল সময় অন্যকে ক্ষমা করতে। আর যে ক্ষমা করতে পারে সে নিজের জীবনে খ্রিস্টকে উপলব্ধি করতে পারে। সাধু পিতর অনেকবার ভুল করেছেন এমনকি যিশুকে অস্বীকারও করেছেন কিন্তু তিনি আবার ক্ষমাও চেয়েছেন আর যিশু তাকে ক্ষমা করেছেন। আমরা আমাদের ব্যক্তিজীবনে সাধু পিতর ও পৌলের মন পরিবর্তন, ক্ষমা প্রার্থনা ও যিশুর ক্ষমাদান থেকে শিক্ষা নিতে পারি। তাই আসুন এই প্রায়শ্চিত্তকালে অন্যকে ক্ষমা করি এবং নিজের কৃতকর্মের জন্য অন্যের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেকে যিশুর প্রকৃত শিষ্যরূপে প্রস্তুত করে তুলি।