গত ১৭ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রোজ শুক্রবার রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের উত্তম মেষপালক ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লী উদ্যোগ এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, পবা এপি ও কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নরত খ্রিস্টান যুবক যুবতীদেরকে নিয়ে ফাদার এফ, চেস্কতা হল রুম, কারিতাস আঞ্চলিক অফিস মহিষবাথান রাজশাহীতে বিশেষ প্রাণবন্ত এক শিক্ষা সেমিনার আয়োজন করা হয়।
উক্ত কর্মশালায়, উপস্থিত ছিলেন শ্রদ্ধেয় ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডী, পাল-পুরোহিত,ফাদার লিটন কস্তা, সহকারী পাল-পুরোহিত, ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লী, বাগানপাড়া, জনাব স্বপন মন্ডল, সিনিয়র ম্যানেজার, ওয়ার্ল্ড ভিশন, রাজশাহী এসিও, মি. ডেভিড হেম্বম, আঞ্চলিক পরিচালক কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল, শ্রদ্ধেয় ফাদার শ্যামল জেমস্ গমেজ- যুব সমন্বয়কারী রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ ও পরিচালক, সেন্ট পিটারস্ সেমিনারী, ফাদার প্রশান্ত আইন্দ পাল-পুরোহিত, মুশরইল ধর্মপল্লী, ফাদার পিউস গমেজ, ইনচার্জ (মাধ্যমিক শাখা), সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজ, বনপাড়া, নাটোর, জনাব রিচার্ড অজয় সরকার, ফিল্ড কো-অরডিনেটর
স্পন্সরশীপ, এডুকেশন, চাইল্ড প্রটেকশন এন্ড পার্টি শিল্পেশন। উক্ত সেমিনারে মোট অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রী ছিল ২০৭ জন।
অভ্যর্থনা ও জাতীয় সংগীতের সহযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এর পর পবিত্র বাইবেল পাঠ ও প্রার্থনার ( শ্রদ্ধেয় ফাদার শ্যামল গমেজ) মাধ্যমে কর্মশালার শুভ উদ্ধোধন করা হয়।
অতঃপর স্বাগত বক্তব্যে: সেমিনারের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্বপন মন্ডল, সিনিয়র ম্যানেজার, ওয়ার্ল্ড ভিশন, রাজশাহী এসিও, বলেন, এখনই সময় যুবাদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং সেই লক্ষ্যকে মনে প্রাণে যাপন করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। তিনি আরো বলেন, প্রত্যেকে জীবন লক্ষ্যকে অবিষ্কার করতে হবে।
শ্রদ্ধেয় ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডি উদ্ধোধনী বক্তব্যে বলেন “লক্ষ্য বিহীন জীবন হলো মাঝিবিহীন নৌকার মতো। ”
সর্ম্পক একটি দায়িত্ব: জীবনের উৎস, বিকাশ প্রকাশ ( Relationship as a Responsibility: Source of Life, Growth and Identity- এই বিষয়টির উপর বক্তব্য রাখেন শ্রদ্ধেয় ফাদার পিউস গমেজ, ইনচার্জ ( মাধ্যমিক শাখা) সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজ, বনপাড়া নাটোর।
তিনি আরো বলেন, সম্পর্ক হলো কোন কিছুর সাথে নিবিড় ভাবে যুক্ত হওয়া। মানুষে মানুষে সর্ম্পক কি ভাবে গড়তে হয়, ছাত্র-ছাত্রীর জীবনে সর্ম্পকের ধরণ কেমন হতে পারে, সম্পর্ক গড়তে কি নিয়ম ও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে কি ভুমিকা রাখতে হবে। বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠছে ঠিকই কিন্তু সে সম্পর্ক রূপ নিচ্ছে শুধু দৈহিক চাহিদায় যা বর্তমানে অত্যন্ত বিপদ জনক বাস্তবতা। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব বন্ধুদের উভয়েরই।
আমার জীবন, আমার স্বপ্ন (my life-my vision)- এই বিষয়ে সহভাগিতা করেন জনাব স্বপন মন্ডল, সিনিয়র ম্যানেজার ওয়ার্ল্ড ভিশন রাজশাহী এসিও। তিনি বলেন, শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো আবেগকে নিয়ন্ত্রণ Emotion control করা। নিজের আবেগকে শিক্ষার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানো
Dare to Discover (ডেয়ার টু ডিসকভার) এই বিষয়টির উপর উপস্থাপনা দেন, জনাব রিচার্ড অজয় সরকার, ফিল্ড কো- অরডিনেটর স্পসরশীপ। তিনি তাঁর সহভাগিতায় বলেন, আমার নিজেকে প্রশ্ন করতে শিখতে হবে। আমি কে? আমি কিসের সাথে যুক্ত? আমি কোথায় যাচ্ছি? আমি কি ভাবে সেখানে যাব? আমার ব্যক্তি জীবনের সাথে প্রভাবিত বিষয়, পরিবার, সমাজ, সংস্কৃতি অনেক বিষয় যুক্ত। তিনি বাইবেলের আদিপুস্তক থেকে যাকোবের ছোট সন্তান যোসেফের জীবন, স্বপ্ন এবং দায়িত্ব সম্পর্কে প্রাণবন্ত কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, গত বছরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় কার সাথে কাটিয়েছো কোন ব্যক্তিটির সাথে? তুমি কিসে আসক্ত ছিলে? তোমার কোন শিক্ষা জীবন পরিবর্তন করেছে? আমি আমার সম্পর্কে কি চিন্তা করছি? what is my weak Point? তিনি বাইবেল থেকে অপব্যয়ী পুত্রর গল্পটির সাথে তুলনা করে বলেন আমার চরিত্র কেমন? আমাদের ওই চরিত্রে ভাল, পরিবার, বন্ধু ও সমাজ সবই আশীর্বাদ জীবন চলার পথে।
বর্তমান বিশ্ব ও যুব নেতৃত্ব এই বিষয়ে আলোচনা করেন মি. ডেভিড হেম্রম, আঞ্চলিক পরিচালক, কারিতা রাজশাহী। তিনি মূলত নেতৃত্ব গঠন ও নেতৃত্বের ধরণ এবং একজন নেতা হিসেবে সমাজে, দেশে কিভাবে ভূমিকা রাখা যায় তা আলোচনা করেন। Types of Leadership ১)Democratic ২) Autocratic ৩) transitional ৪) Coaching Charismatic. তিনি আরো বলেন, একটি ভালো পরিকল্পনা যে কোন কাজের অর্ধেক করা। আর একজন ভালো নেতা পারেন ভালো পরিকল্পনা করতে।
আলোচনার শেষ প্রান্তে প্রশ্নোত্তর পর্ব বা প্যানেল আলোচনা করা হয়। প্রশ্নোত্তর ছাড়াও বিভিন্ন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রী। অনেকের প্রশ্ন ছিল কোন পর্যায়ে এসে আমাদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে? অনেকে আবার এই সেমিনারের মাধ্যমে তাদের জীবনের লক্ষ নির্ধারণ করতে পেরেছে বলে অভিমত প্রকাশ করে। সর্বপরি এই সেমিনারটি সকলের কাছে অনেক গুরত্বপূর্ণ ও মূল্যবান ছিল।
উক্ত সেমিনারে শেষে ছিল মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । যা ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা বিকাশের একটি সুন্দর প্রয়াস ছিল। সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে অনেক সংস্কৃতির নৃত্য বিশেষ করে (বাংলা, গারো, খাসিয়া, সাঁওতাল, উরাঁও) নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
পরিশেষে ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডি সকলকে ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, বলেন সেমিনারটি সফল ভাবে উদযাপন করতে পেরেছি। ঈশ্বরকে অনেক ধন্যবাদ জানাই তোমরা যা কিছু শিখেছো তা যেন নিজেদের জীবনে কাজে লাগাতে পার। এখন থেকে প্রতি বছর এক বার এই রকম সেমিনারের আয়োজন করা হবে জানিয়ে সেমিনারের সমাপ্তী ঘোষণা করেন।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : এলিয়াস সরেন ও ফাদার শ্যামল জেমস্ গমেজ।