ফাদার সাগর কোড়াইয়া

বোর্ণী ধর্মপল্লী ভাওয়াল থেকে অভিবাসী হওয়ার শতবর্ষ এবং ধর্মপল্লী প্রতিষ্ঠার প্লাটিনাম জুবিলী পালনের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত। একশত বছর পূর্বে উত্তরবঙ্গে পল গমেজ (পলু শিকারী) ও বোর্ণীতে নাগর রোজারিও’র পথ ধরে পরবর্তীতে অনেকেই বোর্ণী মায়ের চরণে স্থান করে নিয়েছেন। বড়াল ও শীতলক্ষ্যার বুকে বহু জল গড়িয়েছে। ইতিহাসও বাঁক নিয়েছে অন্যপথে। সময়ের সাথে সাথে দলে দলে স্বপ্নবিলাসী ভাওয়ালবাসী খ্রিস্টানগণ যমুনা ও চলনের বাঁধভাঙ্গা ঢেউ অতিক্রম করে বোর্ণীর বন-জঙ্গলে ঘেরা অজানা-অচেনা এসে বসতি স্থাপন করেন। আজ সবই ইতিহাস। তবে ইতিহাসের পিছনে প্রাগৈতিহাসিকতা লুকিয়ে থাকে। আর সে ইতিহাস বের করে আনাই হচ্ছে ইতিহাস খনন। বোর্ণী ধর্মপল্লীর ইতিহাস খুঁজতে গেলে স্বাভাবিকভাবে ভাওয়াল অঞ্চল ও দোম আন্তনীও’র নাম চলে আসে। এই দুই অনুষঙ্গ বাদ দিয়ে কখনোই বর্তমান ইতিহাস দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।

ভাওয়াল এলাকায় খ্রিস্টধর্ম প্রচারে দোম আন্তনীও’র নাম সবার আগে আসবে। যদিও দোম আন্তনীও সমন্ধে তেমন বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে ‘ইতিহাসে উপেক্ষিত’ বইয়ের লেখক তারাপদ মুখোপাধ্যায় তাঁর বইয়ে আনুমানিক ১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দে দোম আন্তনীও’র জন্ম হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। বাংলার বার ভুঁইয়াদের অন্যতম ফরিদপুর শহরের কুড়ি মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে ভূষণা রাজ্যের রাজপুত্রকে মগ জলদস্যুরা ১৬৪৯ খ্রিস্টাব্দে অপহরণ করে আরাকানে নিয়ে যান। ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে ২২ বছরের রাজপুত্রকে পর্তুগীজ ফাদার মানুয়েল দ্য রোজারিও মগ দস্যুদের নিকট থেকে ক্রয় করে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করেন। তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী রাজপুত্র খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে আন্তনী দ্যা রোজারিও নাম গ্রহণ করেন। তিনি দোম আন্তনী বা দোম আন্তনীও নামেও পরিচিত ছিলেন। “সে যুগে এই স্বনামধন্য বঙ্গসন্তান ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে এমন এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন যে তাকে ঘিরে ভারত ও ইউরোপে এক প্রচণ্ড বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বাংলাভাষার প্রথম মুদ্রিত সাধু গদ্যরীতির পুস্তক ‘ব্রাহ্মণ রোমান ক্যাথলিক সংবাদ’ গ্রন্থের লেখক হিসেবে এবং একজন নিষ্ঠাবান খ্রিস্টান, খ্রিস্টধর্মশাস্ত্রবিদ ও খ্রিস্টধর্মের সার্থক প্রচারক হিসেবে দোম আন্তনিও সে যুগে ছিলেন সর্বাধিক আলোচিত ব্যক্তি”।

১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিকবিদ ও গবেষক জেজুইট ফাদার হোস্টেন ((Fr. H. Hosten, S.J.) ‘Bengal Past and Present’ নিবন্ধে “The Three first type-printed Bengali Books” আলোচনা প্রসঙ্গে দোম আন্তনীও নামক একজন অজ্ঞাত লেখকের সাথে বাঙ্গালীর প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইতিহাসবিদ সুরেন্দ্রনাথ সেনের সম্পাদনায় দোম আন্তনীওর ‘ব্রাহ্মণ রোমান ক্যাথলিক সংবাদ’ প্রকাশিত হলে শিক্ষিত বাঙ্গালীর নিকট দোম আন্তনীও আরও পরিচিত হয়ে উঠেন। তখনও পর্যন্ত দোম আন্তনীও ইতিহাসে উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছেন। অবশেষে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক ড. তারাপদ মুখোপাধ্যায় লণ্ডনে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সযত্নে রক্ষিত দোম আন্তনীওর সমকালে বঙ্গদেশে কর্মরত পর্তুগীজ ফাদারদের স্বহস্তে লিখিত বহু পত্র ও প্রতিবেদন থেকে কয়েকটি পত্রের ইংরেজি অনুবাদ সংগ্রহ করে দোম আন্তনীওর এক সংক্ষিপ্ত তথ্যনির্ভর জীবনী প্রকাশ করেন। আর সে বইটি ‘ইতিহাসে উপেক্ষিত’ নামে প্রকাশ করা হয়।

খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের পরে দোম আন্তনীও ১৬৭০ খ্রিস্টাব্দে নিজ এলাকা কোষাডাঙ্গা নামক স্থানে প্রচার কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি পরিবার পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ভাওয়াল অঞ্চলের নাগরী এলাকার দরিদ্রদের মধ্যে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করতে থাকেন। কথিত আছে যে দুই বছরের মধ্যে তিনি ভাওয়াল অঞ্চলে প্রায় বিশ হাজারেরও বেশি মানুষকে দীক্ষিত করেন। দোম আন্তনীওর ধর্মপ্রচার শুধু হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো না। বেশ সংখ্যক মুসলমানও তাঁর ধার্মিকতা ও বাগ্মীতায় মুগ্ধ হয়ে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন। তৎকালীন বাংলার শাসনকর্তা শায়েস্তা খাঁ এই সংবাদ জানতে পেরে ক্রুদ্ধ হয়ে দোম আন্তনীওকে কারারুদ্ধ করেন। কিছুদিন পর শায়েস্তা খাঁর মন পরিবর্তন হলে দোম আন্তনীওর ধার্মিকতা, পবিত্রতা ও দারিদ্রতা দেখে শায়েস্তা খাঁর হৃদয়ে করুণার উদ্রেগ হয়। তিনি দোম আন্তনীওকে কারামুক্ত করে ঢাকা জেলার ভাওয়াল অঞ্চলের কিছু পতিত জমি তাঁকে দান করেন এবং সেখানে ধর্মপ্রচারের কেন্দ্র স্থাপন করার অনুমতিও দেন।

১৬৬৮-৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দোম আন্তনীও ভাওয়াল এলাকায় খ্রিস্টধর্ম প্রচারের সময় নাগরীতে থাকাকালীন তিনি ‘ব্রাহ্মণ রোমান ক্যাথলিক সংবাদ’ নামক গদ্য পুস্তক রচনা করেন। নাগরীতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করতে গিয়ে দোম আন্তনীও উপলব্ধি করেছিলেন যে, বাঙ্গালী হিন্দুদের কাছে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণযোগ্য করতে হলে বাংলা ভাষায় খ্রিস্টধর্মতত্ত্ব রচনা করতে হবে। এই কারণে তিনি কথোপকথনের আঙ্গিকে খ্রিস্টীয় ধর্মতত্ত্ব বাংলা ভাষায় রচনা করেন। দোম আন্তনীও’র ‘ব্রাহ্মণ রোমান কাথলিক সংবাদ’ ও নাগরীর বিষয়ে ড. অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে ডেনীস দিলীপ দত্ত বলেন, ‘নাগরী গ্রামের সন্ত নিকোলাস তলেন্তিনো মিশনের খ্রিস্টানগণ কৃষক শ্রেণীভুক্ত ছিলো এবং তাহারা পর্তুগীজ ভাষা তো দূরের কথা, মাতৃভাষা বাংলাতেও লিখিতে ও পড়িতে জানিত কিনা সন্দেহ। এই কৃষি প্রধান হিন্দু-মুসলিম জনগোষ্ঠীর মনোভাবরের প্রতি চাহিয়াই দোম আন্তনীও ব্রাহ্মণ-রোমান কাথলিক সংবাদ রচনা করিয়াছিলেন, মূল উদ্দেশ্য ছিল তর্কে হিন্দুদিগকে হেয় প্রতিপন্ন করিয়া রোমান কাথলিক ধর্মের মহিমা বৃদ্ধি করা’।

দোম আন্তনীও’র নিকটে যারা খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন তারা বেশীর ভাগই হিন্দু ধর্মের নিচু শ্রেণী থেকে আসা। সেই সময় হিন্দু সমাজের মধ্যে জাতিভেদ প্রথা ব্যাপকভাবে শিকড় গেঁথে বসেছিলো। সমাজের যারা নিচু শ্রেণীর তাদের সাথে উঁচু শ্রেণীর লোকদের মেলামেশা ছিল নিষিদ্ধ। তাদের মধ্যে বিবাহ, পূজা-অর্চনা, খাওয়া-দাওয়া, একই পুকুর থেকে জল আনা, গোসল করা এমনকি পেশার দিক থেকেও প্রভেদ লক্ষণীয় ছিলো। যারা উঁচু শ্রেণীর তারা পূজা-অর্চণার কাজ করবে আর নিচু শ্রেণীর লোকেরা উঁচু শ্রেণীর ভরণ-পোষণের কাজ করবে। নিচু শ্রেণীর চাড়াল (নমশূদ্র) হিন্দুদের মধ্যে বেশীর ভাগেরই পেশা ছিল চাষা (কৃষক), ডোম, মুচি, জোলা (তাঁতি), জেলে, মেথর এবং নাপিতের কাজ করা। অনেকের মতে, যারা চাষা তাদের পূর্বপুরুষগণ মুসলমান ছিলেন। আবার জোলা বলতে মুসলমান তাঁতি বুঝায়।

ধারণা করা হয়, খ্রিস্টান সমাজে ব্যবহৃত এই নামের লোকদের পূর্বপুরুষরা হয়তো মুসলমান ছিলেন। আবার চাড়াল যেহেতু নিম্নবর্ণের হিন্দু; তাই হিন্দু থেকে তারা খ্রিস্টান হয়েছেন। নিচু শ্রেণীর হিন্দুরা চাইলেও কখনো উঁচুদের পেশা গ্রহণ করতে পারতো না। আর এটি ছিল সেই সময়কার ক্ষতিকর প্রথা। এতে করে নিচু শ্রেণীর লোকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি ও রাগ ছিলো। ধর্ম যেহেতু মানুষকে বাঁচতে শিক্ষা দেয় তাই সেই সময় নাগরী ও বঙ্গের বিভিন্ন স্থানের নিচু শ্রেণীর লোকেরা খ্রিস্টধর্মের শ্রেণী ভেদাভেদহীন শিক্ষার সংস্পর্শে এসে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা নেন। এছাড়াও অনেকে ধর্মপ্রচারক যাজকদের দ্বারা বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়ে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। মহান এই ধর্মপ্রচারক দোম আন্তনীও পরবর্তীতে আরো অনেক স্থানে বাণীপ্রচার করেন এবং ১৬৯৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তবে দুঃখের বিষয় তাঁকে কোথায় কবরস্থ করা হয়েছিলো তা আজও অজানা।

১৬৬৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে আগস্টিনিয়ান যাজকগণ ভূষণা রাজ্যের কোষাভাঙ্গায় প্রচার কাজ করতেন। সেখান থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন এলাকায় বাণী প্রচারে যেতেন। সেই সময় নদী ভাঙ্গনের জন্য অনেকেই ছিলেন ভূমিহীন। প্রায়ই তারা জোতদারদের নানা অত্যাচারের শিকার হতেন। এমন অবস্থা দেখে ফাদার লুইস দস আঞ্জুস ১৬৯৫ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার নিকটবর্তী ভাওয়াল পরগনার নাগরী গ্রামটি ক্রয় করেন। ধারণা করা হয় মধুমতি নদীর ভাঙ্গন এবং জমিদার কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হওয়া কোষাভাঙ্গার খ্রিস্টানদের নাগরীতে বসতি করান। ভাওয়াল অঞ্চল এবং ফরিদপুরের ভাষাগত আঞ্চলিক টানের মধ্যে মিল থাকার এটা একটি কারণ। পরবর্তীতে ফাদার আঞ্জুস করান, তিরিয়া ও বাগদীসহ আরো দুটি গ্রাম ক্রয় করে নাগরীর অন্তর্ভুক্ত করেন। নাগরী গ্রাম ভাওয়াল এলাকার প্রথম মিশনকেন্দ্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।

১৭১২ খ্রিস্টাব্দের দিকে ফাদারদের মতে, বঙ্গে সেই সময় তিন ধরণের ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের বসবাস ছিলো- ক) কুঠি ও ব্যবসায়ে কর্মরত ইউরোপীয়গণ খ) ভাড়াটে সৈন্য (এরা মোঘল শাসকদের অধীনে কর্মরত খাঁটি পর্তুগীজ ও ভারতীয় সংমিশ্রণজাত সন্তান) গ) খ্রিস্টধর্মে দীক্ষাপ্রাপ্ত স্থানীয় জনগণ। এতে বুঝা যায় সেই সময় পর্তুগীজরা এদেশের নারী-পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আলাদা ধরণের মিশ্রিত সমাজ গড়ে তুলেছিলেন। পরবর্তীতে তাদের ঘরের সন্তানরা নিশ্চয় পর্তুগীজ পদবী গ্রহণ করেন এবং বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েন। উল্লেখ্য যে, বহু পর্তুগীজ সৈন্য, নাবিক ও ব্যবসায়ী পূর্ববঙ্গের স্থানীয় বাঙ্গালী নারীদের বিয়ে করেন এবং তাদের সন্তানদের কাথলিক হিসাবে গড়ে তুলেন। এছাড়াও পর্তুগীজদের অধীনে বেশ কিছু সংখ্যক হিন্দু ও মুসলমান দাস-দাসী এবং চাকর-চাকরানী ছিল, যাদেরকে আগস্টিনিয়ান বাণীপ্রচারকগণ খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করেন। বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ববঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলের খ্রিস্টানদের অনেকেই পর্তুগীজ-ইন্দো-পর্তুগীজদের বংশধর। আর ভাওয়াল অঞ্চলের খ্রিস্টানগণ নিম্ন হিন্দুদের বংশধর।

১৭২৫ খ্রিস্টাব্দে ফাদার আম্ব্রোজিও দ্যা সান্তো আগস্তিনো ভাওয়াল অঞ্চলের নাগরী মিশনের পাল-পুরোহিত (ফাদার ইনচার্জ) ছিলেন। ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর এক বিবরণীতে দেখা যায় যে, নাগরীতে ৬০০ বয়স্ক কাথলিক খ্রিস্টান এবং ৬০০ শিশু-কিশোর ছিলো। তাছাড়া এর আশে পাশে ৯০০ বয়স্ক কাথলিক খ্রিস্টান ছিলো। এই তথ্য কিছুটা ভুল হতে পারে। কারণ বয়স্ক ও শিশু-কিশোর কাথলিকের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আরো অন্য বয়সের কাথলিক থাকার সম্ভাবনা কোন মতেই উপেক্ষা করা যায় না। তবে এটা সত্য যে, সেই সময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খ্রিস্টান বসতি গড়ে তুলেছিলেন। আঠারো শতকের প্রথম তৃতীয় দশকে পর্তুগীজ ফাদার মানুয়েল দ্য আসুম্পসাউ নাগরী সাধু নিকোলাসের গির্জায় বসে বাংলা ভাষার এক দ্বিভাষিক অভিধান ও খণ্ডিত ব্যাকরণ রচনা করেন। ধারণা করা হয়, এটাই ছিলো প্রথম প্রকাশিত বাংলা ভাষার অভিধান। ফাদার আম্ব্রোজিও তাঁর বিবরণীতে গুপ্ত খ্রিস্টানত্বের কথাও উল্লেখ করেন। গুপ্ত খ্রিস্টানগণ পূর্বে ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছিলেন। ফাদার আম্ব্রোজিও প্রতি বছর ৩০০ ব্যক্তিকে গুপ্ত দীক্ষাস্থান দিতেন। ১৮৬২ থেকে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিশপ দ্যুফালের শাসনামলটি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এই সময় অনেকে কাথলিক মণ্ডলীভুক্ত হয় এবং হাজার হাজার শিশু দীক্ষাস্থান লাভ করে। তবে বাণীপ্রচারকদের অবিরাম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের সংখ্যা ছিল স্বল্প। ১৮৬২ থেকে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত হিন্দুদের মধ্য থেকে খ্রিস্টধর্মভুক্ত ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের বার্ষিক সংখ্যা ছিল ৩০ থেকে ৪০ জন এবং মুসলমানদের মধ্য থেকে ১২ জন। তাছাড়া বছরে প্রায় ৩৫টি মরণাপন্ন হিন্দু শিশুকে দীক্ষাস্নাত করা হতো।

‘ফাদার আম্ব্রোজিও তৎকালীন ধর্মপ্রচার পদ্ধতি সম্পর্কে অমূল্য তথ্য লিপিবদ্ধ করে গেছেন। তিনি বলেন: ‘আমাদের বহু কাটেখ্রিস্ট আছেন। তারা আমাদের কাছ থেকে কোন বেতন পান না, কারণ বেতন দেবার সামর্থ আমাদের নেই। তাদের শিষ্যেরা, অর্থাৎ নবদীক্ষিত ব্যক্তি ও খ্রিস্টধর্ম শিক্ষাগ্রহণকারীগণ, ক্যাটেখ্রিস্টদের ভরণপোষণ করে থাকে। তারা ক্যাটেখিস্টদেরকে ‘মাস্টার’ বলে সম্বোধন করে’। পরবর্তীতে কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন সময় নাগরী এবং পাশ্ববর্তী এলাকা তুমিলিয়া, দড়িপাড়া, রাঙ্গামাটিয়া, মঠবাড়ীতে খ্রিস্টানরা ছড়িয়ে পড়তে থাকেন। ফলে খ্রিস্টানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাওয়াল অঞ্চলে আরো বেশ কয়েকটি মিশনকেন্দ্র গড়ে উঠে।

(চলমান)

Please follow and like us: