একজনের পাঠের মধ্য দিয়ে যীশু নিজেই অন্যদের কাছে কথা বলেন। দ্বিতীয় ভাটিকান মহাসভার পুণ্য উপাসনা বিষয়ক সংবিধানের ৩৩ নং অনুচ্ছেদে বলে: “উপাসনার মধ্যে ঈশ্বর তাঁর জনগণের সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রভৃু যীশু খ্রীষ্ট আজও তাঁর মঙ্গলবাণী ঘোষণা করেন।” যীশু তার ভালবাসার কথা, মুক্তির কথা, ক্ষমা-বন্ধুত্বের কথা, পিতার কথা প্রভৃতি তার বাণীর মাধ্যমে আমাদের জানান। সেভাবে ভক্তগণ ধর্মশিক্ষা লাভ ক’রে বিশ্বাসে পুষ্টিলাভ করে এবং তাদের অন্তর ঈশ্বরে নিবেদন ক’রে ঈশ্বরের অনেক দয়ালাভ করতে পারেন। সেদিক থেকে পবিত্র বাণী পাঠ করা অনেক গুরুত্ব বহন করে। তাই মণ্ডলী তার জীবনে প্রভুর দেহের মতই পবিত্র বাণীকে বিশেষ শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখে, রাখে ও ব্যবহার করে। মণ্ডলী পবিত্র ঐতিহ্যের সঙ্গে পবিত্র বাইবেলকে একত্রে তার বিশ্বাসের সর্বোচ্চ নীতি হিসাবে গ্রহণ করেছে। দ্বিতীয় ভাটিকান মহাসভার ঐশ প্রত্যাদেশ বিষয়ে সংবিধানের ২১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়: “কারণ, যেহেতু তা ঈশ্বর কর্তৃক অনুপ্রাণিত ও চিরকালের নিমিত্ত লেখা, সেহেতু তা ঈশ্বরের বাণীকে এক অপরিবর্তনীয়রূপে উপস্থাপন করে এবং পবিত্র আত্মার কন্ঠস্বরকে প্রবক্তা ও প্রেরিত শিষ্যদের কথার মধ্যে বার বার ধ্বনিত করে তোলে। সুতরাং মণ্ডলীর সমস্ত প্রচারকার্য, এমনকি সম্পূর্ণ খ্রীষ্টধর্মই, পবিত্র শাস্ত্র কর্তৃক পরিপুষ্ট ও পরিচালিত হওয়া উচিত। পবিত্র গ্রন্থগুলিতে স্বর্গস্থ পিতা তাঁর সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ভালবাসা সহকারে এগিয়ে আসেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন। আর ঐশবাণীর শক্তি ও ক্ষমতা এমনই যে, এই বাণী খ্রীষ্টমণ্ডলীর পরিপোষক ও প্রাণশক্তিরূপে মণ্ডলীর সেবা করে এবং মণ্ডলীর সন্তানদের বিশ্বাসের শক্তি, আত্মার খাদ্য ও আধ্যাত্মিক জীবনের কালজয়ী ঝর্ণারূপে তাদের সেবা করে। বাইবেল এই কথাগুলিকে সবচেয়ে নির্ভুলভাবে সত্য বলে প্রমাণ করে: “ পরমেশ্বরের বাণী সপ্রাণ ও সক্রিয়” (হিব্রু ৪:১২) এবং “তার শক্তি তোমাদের গড়ে তুলতে পারে এবং ঈশ্বরের কাছে নিবেদিত সকলের মধ্যে স্থান দিয়ে তোমাদেরও সেই একই ঐশ সম্পদের অধিকারী ক’রে তুলতে পারে” (শিষ্য ২০:৩২; দ্র: ১ থেসা ২:১৩)।
ঈশ্বরই হলেন বাইবেলের গ্রন্থগুলির রচয়িতা। “বাইবেলের গ্রন্থগুলি তা-ই দৃঢ়, বিশ্বস্ত ও ত্রুটিহীনভাবে শিক্ষা দেয়। এইরূপে ‘শাস্ত্রের প্রতিটি উক্তিই ঐশ প্রেরণায় অনুপ্রাণিত, মানুষকে ধর্মশিক্ষা দিতে, তার ভুল দেখিয়ে দিতে, ত্রুটি সংশোধন করতে আর সৎ জীবনের দীক্ষা দিতে শাস্ত্রের প্রতিটি উক্তিরই উপযোগিতা আছে। এতে পরমেশ্বররের সেবক উপযুক্ত কর্মক্ষমতা পায়, প্রতিটি সৎকর্ম করার জন্যে প্রয়োজনীয় সামর্থ্যই পায়।
পবিত্র বাণী পাঠ করা হলে মানুষ তা শুনে ধ্যানে বুঝবে এবং নিজ জীবনের গভীরতায় তা উপলব্ধি করতে চেষ্টা করবেন মা মারীয়া মত যিনি বিশ্বাসে সব কথা নিয়ে মনে মনে অনুক্ষণ ধ্যান করতেন (লূক ২:১৯, ৫১)।
যে পবিত্র বাইবেল পড়বে তাকে তাই যথযোগ্য প্রস্তুতিতে তা পড়া দরকার। এ বাণী পাঠ একটি মৌলিক সেবাদায়িত্ব। বাণী যেন আন্তরিকতা, ভক্তি, ভালবাসা ও বিশ্বাস নিয়ে পাঠ করা হয়। সবার মনে রাখতে হবে মানুষের সামনে পাঠ করা এক বড় চ্যালেঞ্জ, এক কঠিন কাজ তাই সেভাবে আগে থেকেই অভ্যাস ও প্রস্তুতি দরকার। ঈশ্বর সুন্দর গলা দিয়েছেন সেজন্য তাঁকে ধন্যবাদ। এ গলার চর্চা ও সাধনা ক’রে তা আরো উপযোগী ও ফলপ্রসূ করা যাবে।
দ্বিতীয় ভাটিকান মহাসভার পুণ্য উপাসনা বিষয়ক সংবিধানের ২৪ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়: “উপাসনা অনুষ্ঠানে পবিত্র শাস্ত্র বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ পবিত্র শাস্ত্র থেকেই পাঠ পড়া হয়, পাঠের ব্যাখ্যা দেয়া হয়, এবং সামসঙ্গীত গান করা হয়। শাস্ত্র থেকেই অনুপ্রেরণা ও শক্তি লাভ ক’রে প্রার্থনাদি, অনুপ্রার্থনাদি ও ভক্তিগীতিসমূহ এবং শাস্ত্র থেকেই উপাসনার ক্রিয়াদি ও চিহ্নসমূহ তাদের তাৎপর্য খুঁজে পায়। সুতরাং উপাসনার পুনরুজ্জীবন, অগ্রগতি ও উপযোগীকরণ আনতে হলে পবিত্র শাস্ত্রের প্রতি সেই মধুর ও জীবন্ত প্রেমের উন্নতি সাধন একান্ত প্রয়োজন, যে প্রেমের সাক্ষ্য রয়েছে প্রাচ্যের ও প্রতীচ্যের প্রাচীন ঐতিহ্যে।”
দ্বিতীয় ভাটিকান মহাসভার পুণ্য উপাসনা বিষয়ক সংবিধানের ২৯ নং অনুচ্ছেদে অনুসারে বলা যায়: পাঠক উপাসনার নিয়ম ও প্রকৃতি অনুসারে সত্যিকার উপাসনা কার্য সম্পাদন করেন। তাই উপাসনার পর্যায়, স্থান ও ভক্তদের প্রত্যাশা অনুসারে তাদের অকপট ভক্তি ও মাধুর্যসহ তাদের নির্ধারিত কর্তব্য করা উচিৎ। সুতরাং পাঠককে নিজ নিজ মাত্রা অনুযায়ী উপাসনার ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হতে হবে এবং তারা যেন যথাযথ ও সুনিয়ন্ত্রিতভাবে তাদের করণীয় সুসম্পন্ন করতে পারে সেজন্য তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
সে আগে থেকে দে’খে, যাচাই ক’রে নিশ্চিত হ’য়ে বাণী পাঠের প্রস্তুতি নিবে। নিবিষ্ট চিত্তে বার বার প’ড়ে পাঠের ভাব ও বিষয় নিজের অন্তরে শু’নে ও বুঝে সে অনুসারে উপযুক্ত গাম্ভর্যে পাঠ করার জন্য প্রস্তুত হবে। যেন পরে তা সবার সামনে অর্থপূর্ণভাবে পড়তে পারে। এভাবে তারা ‘যীশুর বিষয়ে পরম জ্ঞান’ (ফিলি ৩:৮) অন্যদের কাছে ফলপ্রসূভাবে পরিবেশন করতে পারবেন। সাধু জেরোমের কথা মনে রাখা প্রয়োজন: “বাইবেল সম্বন্ধে অজ্ঞতা হল খ্রীষ্টের সম্বন্ধে অজ্ঞতা।”
পাঠের নির্দিষ্ট সময়ের ঠিক আগে শালীন পোশাকে, পরিচ্ছন্নভাবে সে সেখানে উপস্থিত হবে। আর ঠিক সময়ে ভক্তিভরে পাঠ পড়তে যাবে। পাঠ চলাকালে তার জন্য সহজ হবে দৃষ্টিকে সামনে প্রসারিত ক’রে পাঠ দেখা ও সেভাবে অগ্রসর হওয়া। পাঠক ভক্তিসহ বই ধরবে, পড়বে ও যথাস্থানে রাখবে। যেখানে পড়বে সে বাণী মঞ্চে সে সহজ, সোজা ও সরলভাবে দাঁড়াবে আর মানুষের দিকে চোখের যোগাযোগ রেখে জোরে মনোযোগের সঙ্গে পবিত্র বাণী পাঠ করবে।
বাক্যের ভাব অনুসারে যেন পাঠ করা হয়; যেমন প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা, প্রার্থনা, সংলাপ, রাগ, ভালবাসা, আদেশ, অনুরাগ, ক্ষমা, আনন্দ প্রভৃতি। পাঠের সময় চোখে, মুখে, উচ্চারণে যেন তা মানুষের সামনে উঠে আসে এবং ভক্তদের ভিতরে গিয়ে তা যেন তাদের অন্তর স্পর্শ করে, তাদের পরিচালনা করে। বাণী পাঠ ও পাঠকের অবয়ব যেন এক রকম হয় অর্থাৎ তার মুখ যেন পাঠের ভাবের সাথে সমন্বিত হয়। বাণী যেন স্বর ও মুখে সবার জন্য আনন্দ ও অর্থদায়ক ঘোষণা হয়। মুখের চেহারা যেন পাঠের ভিতরের কথা প্রকাশ করে। পড়ার ভাবে, ধরনে যেন যথাসাধ্য উঠানামা, দাড়ি, কমা, ছেদ, বিরতি প্রভৃতি থাকে। সেখানে তাড়াহুড়ার ভাব বর্জন করা দরকার সেজন্য বার বার পাঠের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্বরের পরিবর্তন (উঠানামা), মধুর ও স্পষ্ট উচ্চারণ করতে হবে। পাঠককে উদ্ধৃতি ও সংলাপ দেখে পাঠ করতে হবে। সেজন্য শিক্ষা অভিজ্ঞতা ও অনুশীলন অনেক প্রয়োজন। শ্বাস প্রশ্বাস ও মুখের জন্য বিশেষ অনুশীলন থাকতে পারে। যেমন পাঠের জন্য মুখের, গলার, স্বরের পূর্ব অনুশীলন হতে পারে। পাঠের সময় যেন মানুষের সঙ্গে কিছুটা হলেও চোখের যোগযোগ থাকে। অর্থাৎ যাদের জন্য পড়ছে যেন তাদের দিকে সরাসরি তাকায়।
সেভাবে শব্দের বাক্যের সঠিক উচ্চারণ করতে হবে। উচ্চারণে, পাঠে আঞ্চলিকতা বাদ দিতে চেষ্টা করতে হবে, অশুদ্ধ উচ্চারণ বর্জন করতে হবে। মুখ খুলে জোরে, ভাব অনুসারে স্পষ্টভাবে গলার উঠানামা নিয়ে পড়তে হবে। পাঠকের মাধ্যমে অন্যের নিকট প্রভুর বাণী যেন ছবির মত ফুটে উঠে।
মানুষের বয়স, অভিজ্ঞতা শিক্ষা, ভাষা, সংস্কৃতি, অবস্থা প্রভৃতি বিবেচনা করে সহজ সরল পাঠ করা যেতে পারে। সম্ভব হলে শিশুদের জন্য সোজা ও প্রচলিত শব্দ ও পাঠ ব্যবহার করা, শিশুতোষ বাইবেল ব্যবহার করা বেশী উপযোগী হতে পারে। বিশেষ বিশেষ দিনে, উপলক্ষে মানুষের সহায়তার জন্য বাস্তবতা অনুসারে বাণী পাঠের ছোট ভূমিকা রাখা যেতে পারে।
নিজে নিজে পড়ার ভাব বা কবিতা পাঠের ভাব বর্জন করা প্রয়োজন। করুণভাবে বা এক মেজাজে পড়ার ভাব বর্জন করা দরকার। কারণ প্রভুর বাণী শ্রোতাদের জন্য, পাঠকের নিজের জন্য নয়। প্রভুর জীবন্ত বাণী যেন জীবন্তরূপে পড়া হয় মরা মরা ভাবে বা এক ঘেয়েমিভাবে নয় তাহলে সেই বাণী শুনতে শুনতে মানুষ অমেনাযোগী হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে আর তা শেষে মানুষের কাছে কোন সুসংবাদ দিবে না। মানুষ সুসমাচার শুনে সেটা বাড়ী নিয়ে যাবে নিজে সেভাবে চলবে আর অন্যকে জানাবে যেন তারাও সে বাণী মত চলতে চলতে নিজেরা বাণী হয়ে উঠতে পারে।
পাঠের মূল বা প্রধান শব্দে ও অংশ গুরুত্ব দিতে হবে। সর্বনাম, অব্যয়, বিশেষণ বা কিছু বিশেষ বিশেষ শব্দে জোর দিতে হবে। বাক্যের অর্থ বা ভাব পরিবর্তনকারী শব্দে ও বাক্যাংশেও জোর দিতে হবে। যে শব্দগুলি বাক্যকে সংযুক্ত করে সেসবু বেশী জোর দিতে হবে বাক্যের কাঠামো ও অবস্থান অনুসারে। যেন সেটার মাধ্যমে পাঠের আসল কথা মানুষের বোধগম্য হতে পারে।
মাইক ব্যবহারে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে যেন তার মাধ্যমে কোন ধরনের শব্দ দূষণ না হয়। কারণ সেরূপ হলে তা মানুষের জন্য বিরক্তিকর ও বিঘ্নজনক। জানা যায় মাইক ব্যবহারে অনেক বার ব্যাপক শব্দ হয় এটা মানুষের ক্ষতির কারণ হয়, মানুষকে কষ্ট দেয়। যারা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, উপাসনায় পবিত্র বাণী পাঠ শুনবেন তারা যেন আনন্দের সঙ্গে সে বাণী শুনতে ও গ্রহণ করতে আগ্রহী হন। তবে তাদের মনে রাখতে হবে যে, পবিত্র বাইবেল পাঠের সঙ্গে প্রার্থনা থাকা উচিত যাতে ঈশ্বর ও মানুষের একটা সংলাপ ঘটে। সাধু আমব্রোজ এর কথা, কারণ :“যখন আমরা প্রার্থনা করি, তখন আমরা তাঁকে আমাদের কথা বলি; আর যখন আমরা ঐশবাণী পাঠ করি, তখন আমরা তাঁর কথা শুনি।” তাই মণ্ডলীর পরিচালকগণকে তাদের ভক্তদের উপযুক্ত শিক্ষা-গঠন দিতে হবে, উপযুক্ত বই সরবরাহ করতে হবে যেন তারা পবিত্র বাইবেল ভালভাবে জানতে ও পড়তে পারেন আর সেসব ভিতরে রাখতে পারেন। দ্বিতীয় ভাটিকান মহাসভার ঐশ প্রত্যাদেশ বিষয়ে সংবিধানের ২৩ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়: “যাতে যতদূর সম্ভব ঐশবাণীর সেবকদের পবিত্র শাস্ত্রের পরিপুষ্টি ঐশ জনগণের কাছে ফলপ্রসূভাবে পরিবেশন করতে পারেন। এই পরিপুষ্টি মনকে আলোকিত করে, ইচ্ছাকে সবল করে এবং মানব হৃদয়ে ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা প্রজ্জ্বলিত করে।” তারা সেভাবে অন্তরে পরিপুষ্টি লাভ করতে ও পবিত্রতার পথে অগ্রসর হতে পারবে।
তারা যেন অবিরত তাদের পড়ার প্রচেষ্টা নবায়ন করতে পারে সেজন্য উৎসাহ দিতে হবে। এভাবে তারা যেন আনন্দ ও নিষ্ঠার সাথে এ পাঠের দায়িত্ব মণ্ডলীর শিক্ষার আলোকে সুস্পন্ন করতে পারেন।
দ্বিতীয় ভাটিকান মহাসভার পুণ্য উপাসনা বিষয়ক সংবিধানের ৩৫ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে বিভিন্ন সময়ে পবিত্র শাস্ত্রের অধিক ব্যবহার বিষয়ে বলা যায়: “পুণ্য অনুষ্ঠানাদিতে আরো পর্যাপ্ত, আরো বিচিত্র, আরো উপযুক্ত পাঠ পবিত্র শাস্ত্র থেকে নেয়া উচিত।”
পাঠের সহায়তার জন্য প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন ব্যানার, প্রচারপত্র, প্রাচীরপত্র, দেওয়াললিখন, পুস্তিকা, ছবি ইত্যাদি।
পাঠের আগে পরে যেন সঠিক ও সময়মত উত্তর দিতে পারে সেভাবে পড়তে হবে। তা না হলে উপাসনার এ অংশ অসুন্দর ও কম অংশগ্রহণ পূর্ণ হতে পারে। প্রথম পাঠের পরে সামসংগীত পাঠের সময় পাঠকের বার বার ধুয়ো শব্দ বলার কোন প্রয়োজন নেই। বরং সে এমনভাবে পড়বে বা ধীরে থামবে যেন ভক্তরা নিজেরাই বুঝবে যে এখন ধুয়ো উত্তর দিতে হবে। সেভাবে হলে সবাই অভ্যস্ত হবে আর তখন সবাই একসঙ্গে উত্তর দিবে। এভাবেই প্রভুর বাণী সর্বদা যেন ভক্তদের জীবন বাণী দান করবে। বাণী পাঠ যেন সকল ভক্তের অনুভূতিতে নাড়া দেয়। যারা বাণী পাঠ করেছেন তারাও বিশ্বাস নিয়ে সচেতনভাবে চেষ্টা করবেন প্রতিনিয়ত পঠিত বাণী অনুসারে জীবন যাপন করতে। তারা প্রভুর বাণী অনুসারে সমাজ গঠন করতে সর্বদা চেষ্টা ও কাজ করবেন।
দ্বিতীয় ভাটিকান মহাসভার ঐশ প্রত্যাদেশ বিষয়ে সংবিধানের উপসংহার বাণী উল্লেখ ক’রে এ লেখা শেষ করছি: “এইভাবে, পবিত্র গ্রন্থ পাঠ ও অধ্যয়নের ফলে ‘প্রভুর বাণী দ্রুত বিস্তার লাভ ও প্রতিষ্ঠা লাভ করুক’ (২ থেসা ৩:১) এবং মণ্ডলীর কাছে ন্যস্ত প্রত্যাদেশের ভান্ডার মানুষের হৃদয়কে উত্তরোত্তর অধিক মাত্রায় পূর্ণ করে তুলুক। প্রভুর ভোজের রহস্যানুষ্ঠানে নিয়মিত যোগদানের ফলে মণ্ডলীর জীবন যেমন সমৃদ্ধ হয়ে উঠে, ঠিক তেমনি ঐশবাণীর প্রতি ক্রমবর্ধমান ভক্তিশ্রদ্ধার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জীবনে ‘নিত্যস্থায়ী’ (ইসা ৪০:৮; দ্র:১ পিতর ১:২৩-২৫) নতুন প্রেরণা সঞ্চারিত হোক।”