গত ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে বিকালে ডিকন শেখর ফ্রান্সিস কস্তা ও সজিব সিলভানুস গমেজ’র মঙ্গল কামনা করে আশির্বাদের অনুষ্ঠান পবিত্র ঘন্টা করা হয়। এই আশির্বাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও, পাল-পুরোহিত ফাদার আন্তনী হাঁসদাসহ অন্যান্য ফাদার-সিস্টারগণ ও ধর্মপল্লীর বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত খ্রিস্টভক্তগণ।
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ডিকন শেখর ফ্রান্সিস কস্তা ও সজিব সিলভানুস গমেজ যাজকপদে অভিষিক্ত হন। অভিষেক অনুষ্ঠানের পবিত্র খ্রিস্টযাগে প্রধান পৌরহিত্য করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও। পবিত্র খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে আগত ৫০ জন ফাদার, ১ জন ডিকন, ৪০ জন সিস্টার ও প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টভক্ত।
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও তার উপদেশ বাণীতে বলেন- খ্রিস্টযাগ ছাড়া খ্রিস্টমণ্ডলির অস্তিত্ব থাকবে না, যেকোন স্থানে খ্রিস্টমণ্ডলি প্রতিষ্ঠিত হতে হলে সেখানে যাজক কর্তৃক খ্রিস্টযাগ উৎসর্গীকৃত হতে হবে। খ্রিস্টযাগ ছাড়া খ্রিস্টমণ্ডলির উপস্থিতি থাকতে পারে না। আমরা যদিওবা কয়েকজন খ্রিস্টভক্ত হয়তো জীবন যাপন করতে পারি কোন একটা বিচ্ছিন্ন জায়গায় কিন্তু সেখানে খ্রিস্টমণ্ডলির উপস্থিতি হবে তখনই যখন সেখানে খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ হয়। আর সেখানে খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করতে হলে লাগবে একজন যাজক। শুধু খ্রিস্টযাগ না যে কোন সাক্রামেন্তের জন্যই যাজকের প্রয়োজন। যাজক সেই কাজটি করে যেটা আমরা অনেক টাকা পয়সা দিয়েও কিনতে পারব না। যাজকের আসল পরিচয় সে যাজক, অপরখ্রিস্ট। যাজকদের হাত পবিত্র করা হয় অভিষেকের সময়ে। এই হাত পবিত্র সেই জন্য আমরা অভিষেকের সময় চুম্বন করি। কারণ এই হাত দিয়ে যাজক ঈশ্বরের কাজ সম্পন্ন করবে, আশ্চর্য কাজ সম্পন্ন করবে। যাজক আশ্চর্য কাজ করেন কিন্তু মানুষ হিসেবে নয় তার মধ্যে যে খ্রিস্ট থাকেন সেই খ্রিস্টই এই কাজ করেন। যখন একজন যাজক বেদীতে খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন; তার প্রার্থনার ফলে সাধারণ রুটি যিশুর দেহে রূপান্তরিত হয়, সাধারণ দ্রাক্ষারস যিশুর রক্তে পরিণত হয়। এটা অন্য কেউ করতে পারবে না শুধুমাত্র একজন যাজকের প্রার্থনার ফলেই তা হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এই যাজক অভিষেক অনুষ্ঠানে আমরা সবাই নতুন যাজকদের জন্য প্রার্থনা করব যেন তারা বিশ্বস্ত থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাদের যাজকীয় সেবাকাজ করে যেতে পারেন। ঈশ্বর আমাদের সবাইকে সেই আশির্বাদ দান করুন।
নব অভিষিক্ত ফাদার শেখর ফ্রান্সিস কস্তা তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন- আজ আমার জীবনের অতি স্মরণীয় ও মহানন্দের একটি দিন। আমি সর্বদা মঙ্গলময় ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই কারণ তাঁর ঐশ পরিকল্পনায় আমি এই পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছি এবং যাজকীয় আহ্বান লাভ করেছি। আজ পুণ্যবেদীতে যিশু খ্রিস্টের মহাযাজকত্বে অংশী হতে তিনি আমাকে অভিষিক্ত করেছেন। যাজকত্ব হলো যিশু হৃদয়ের ভালোবাসা। এই অভিষেক দানের মাধ্যমে প্রভু যিশু আমাকে তাঁর হৃদয়ের ভালোবাসা অংশীদার করেছেন যা আমার জন্য প্রভুর বিশেষ একটি উপহার। আমাকে অভিষিক্ত করার জন্য ও সহকর্মী হিসেবে গ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ জানাই রাজশাহী ধমপ্রদেশের পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও’কে। আমার যাজকীয় আহ্বান বুঝতে ও এই পথ চলায় যারা আমাকে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করে আসছে তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা নিবেদন করি। আজ আমি সত্যিই আনন্দিত যে, আমি প্রভুর দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কাজ করার জন্য সুযোগ পেয়েছি। আমি অযোগ্য হওয়া সত্বেও ঈশ্বর আমাকে তাঁর মহান কাজে মনোনীত ও নিয়োজিত করেছেন। এই পবিত্র জীবনে আসা এবং অভিষিক্ত হওয়ার জন্য যারা অকৃত্রিম ভালবাসা, সেবা- যত্ন, শাসন, সুশিক্ষা, উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা, ত্যাগ-স্বীকার এবং অনবরত প্রার্থনা করেছেন তাঁদের প্রতি অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। তাদের ভালোবাসা ও ত্যাগস্বীকারের জন্যই আমি আজ যাজক হিসেবে যজ্ঞ বেদীতে দাঁড়াতে পেরেছি। আজ শ্রদ্ধাভরে আমার স্বর্গীয় বাবা ও মাকে স্মরণ করি। ধন্যবাদ জানাই আমার মা’কে যিনি আমাকে লালন-পালন করেছেন, শিক্ষা দিয়েছেন এবং আহ্বান বুঝতে সাহায্য করেছেন। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি আমার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ফাদার সিস্টার এবং গ্রামবাসীদের যাদের ভালোবাসা, সাহায্য-সহযোগিতা ও দিক নির্দেশনা আমাকে যাজক হওয়ার বাসনাকে বাস্তবে রূপায়িত করেছে। পরিশেষে, আবারও সৃষ্টিকর্তা ও সবাইকে আমার অন্তরের ভালাবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানাই এবং আশির্বাদ ও প্রার্থনা যাচ্না করি যেন আদর্শ যাজক খ্রিস্টের দেখানো পথে পথ চলতে পারি। সবাইকে যাজকীয় অভিষেকের শুভেচ্ছা জানাই।
নব অভিষিক্ত ফাদার সজীব সিলভানুস গমেজ, সিএসসি তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন- নব অভিষিক্ত যাজক হিসেবে আমার মন স্বর্গীয় আনন্দে পরিপ্লুুত। আমি অযোগ্য হওয়া সত্বেও প্রভু আমাকে মনোনীত করেছেন তার দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কাজ করার জন্য। মৃন্ময় পাত্রের ন্যায় ভঙ্গুর হওয়া সত্বেও তার কৃপা ও অনুগ্রহ আমার মধ্যে ঢেলে দিয়েছেন। ঈশ্বরের এই অনুগ্রহ কৃপা লাভ আমার কোন অর্জন নয়, বরং আমার প্রতি ঈশ্বরের মহান দয়া ও ভালবাসার প্রকাশ। আমি যেন এই কৃপা ও আশির্বাদ সারা জীবন নিজের জন্য ও অন্যের জন্য বহন করতে পারি ও অপর খ্রিস্ট হয়ে সকলের মাঝে খ্রিস্টের উপস্থিতি প্রদান করতে পারি। আমি যেন সর্বদা আমার জীবনে প্রভুর ইচ্ছা পূর্ণ করি।
বাংলাদেশ হলিক্রস সম্প্রদায়ের প্রভিন্সিয়াল ফাদার জর্জ কমল রোজারিও বলেন, আজকে অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ফাদার শেখর ফ্রান্সিস কস্তা এবং সজিব সিলভানুস গমেজ আপনাদেরকে এই অনুষ্ঠানের প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই। প্রথমত ধন্যবাদ জানাই এতো সুন্দর একটি হয়েছে তার জন্যে। বিশপ জের্ভাসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই তিনি এই ধর্মপ্রদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমরা কাজ করে যাচ্ছি এই ধর্মপ্রদেশে এবং আরো কাজ করে যাব। উনার সুন্দর একটি সহযোগিতার মনোভাব হয়েছে। খুবই কো-অপারেটিভ সিনোডাল চার্চ যাকে বলে সেই অর্থে তিনি সুন্দরভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
বোর্ণী ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার আন্তনী হাঁসদা তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, মাত্র তিনদিন পূর্বে আমরা অভিবাসনের শতবর্ষ ও শক্তিমতি ধর্মপল্লী প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করেছি এবং আজকে এই ধর্মপল্লী থেকে আরো ২ জন ফাদার উপহার পেলাম ঈশ্বরের দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কাজ করার জন্য। এই জন্য আমরা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি। জোনাইল বিল এলাকা হওয়ায় এখানকার মাটি খুব উর্বর তেমনিভাবে আহ্বানের ক্ষেত্রেও শক্তিমতি কুমারী মারীয়ার ধর্মপল্লী এক উর্বর ধর্মপল্লী হিসেবে ইতিমধ্যেই আমাদের পরিচয় দিয়েছে। নতুন ২জন যাজকসহ ২৭ জন যাজক হয়েছেন এবং ৪৮ জন সিস্টার হয়েছেন এবং প্রভুর দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কাজ করছেন। এটা আমাদের জন্য বোর্ণী ধর্মপল্লীর জন্য আমাদের রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের জন্য এবং বাংলাদেশ মণ্ডলির জন্য অত্যন্ত গৌরবের এবং আনন্দের একটি বিষয়। এই ২জনসহ অন্যান্য সকলকে এই ধর্মপল্লী থেকে আহ্বান করার জন্য এবং সিস্টারদের আহ্বান করার জন্য ঈশ্বরকে আমরা সবসময় ধন্যবাদ দেই এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার