বিশেষ প্রতিবেদন
সংবাদদাতা: শর্মী কস্তা
নিযুক্ত হলো কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক। ড. আরোক টপ্যকে এই দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক অফিসের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশপ জের্ভাস রোজারিও। সভাপতিত্ব করেন কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক সেবাষ্টিন রোজারিও। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী আঞ্চলিক পরিচালক ডেভিড হেম্ব্রম, নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. আরোক টপ্য, পরিচালক, অর্থ প্রশাসক রেমি সুবাস দাস, ফাদার, সিস্টার এবং কারিতাস পরিবারের কর্মকর্তাগণ।
বিশপ জের্ভাস রোজারিও বলেন, আমাদের রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের জন্য ডেভিড হেম্ব্রোম আশির্বাদ ছিলেন। তিনি কারিতাসের হয়ে জনগণের জন্য কাজ করেছেন। আমাদের সকলের পক্ষ থেকে উনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক হিসাবে ড. আরোক টপ্যকে পেয়েছি। উনার প্রতি শুভেচ্ছা। আমরা তার নিকট থেকে কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের উন্নতি কামনা করি। বিশপ রোজারিও তার বক্তব্যে দরিদ্র জনগণের উন্নতিকল্পে প্রকল্প তৈরি করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
বিদায়ী আঞ্চলিক পরিচালক ডেভিড হেম্ব্রোম তার বক্তব্যে বলেন, আমি বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সন্মিলনীর প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার অযোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমাকে গুরু দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। আমি চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলাম। এই মূহুর্তে আমার সকল সহকর্মীকে ধন্যবাদ জানাই।
উল্লেখ্য যে, আরোক টপ্যের জন্ম সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার গুল্টা গ্রামের এক উঁরাও আদিবাসী পরিবারে। পিতার নাম বাবুলাল টপ্য ও মাতার নাম ছবি রানী এক্কা। শিক্ষাজীবন শুরু হয় গুল্টা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি ভর্তি হন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বোর্ণী ধর্মপল্লীর সেন্ট লুইস উচ্চ বিদ্যালয়ে। একই বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে কৃতিত্বের সাথে তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী সরকারী সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে জেনেটিক্স এণ্ড ব্রিডিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০০২ খ্রিস্টাব্দে আরোক টপ্য কারিতাস দিনাজপুর অঞ্চলে কর্মজীবন শুরু করেন। কর্মজীবনের মাঝেই ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবনে মেধা, কর্মনিষ্ঠা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে আরোক টপ্য কারিতাস বাংলাদেশের একজন বিশ্বস্ত সেবাকর্মী হয়ে উঠেন। ২০০২ খ্রিস্টাব্দে কারিতাস দিনাজপুর অঞ্চল ও ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের ফরমেশন অফ ইয়ুথ এণ্ড টিচারস্ প্রোগ্রামের জুনিয়র কর্মসূচি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০০৭ থেকে ২০১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সমন্বিত মানব উন্নয়ন প্রকল্পের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দক্ষতার সাথে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে প্রশাসন/দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কর্মসূচি কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন নিযুক্ত থাকেন। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি কারিতাস কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে সিনিয়র কর্মসূচি কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। ২০২০ হতে ২০২৫ এর জানুয়ারি পর্যন্ত কারিতাসের প্রতিবেশ সংরক্ষণ ও খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।
কর্মজীবনে বিভিন্ন সময়ে ড. আরোক টপ্য কারিতাস বাংলাদেশের কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও পরিবেশ নীতিমালা প্রস্তুতিতে অসামান্য অবদান রাখেন। এছাড়াও সংস্থার পক্ষে তিনি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফোরাম ও নেটওয়ার্ক, যেমন- বাংলাদেশ এগ্রো ইকোলজি প্ল্যাটফর্ম, ফেয়ার ইকোলজি ট্রানজিশন প্রভৃতিতে যুক্ত আছেন।
বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষি প্রতিবেশ, ফুড সিস্টেম এবং উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের আর্থসামাজিক বিষয়াবলি বিষয়ে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ড. টপ্য প্রায় ১২টি রিসার্চ/স্টাডি’র সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়াও দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি প্রকল্প পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেন। জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি প্রতিবেশ, দূর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন কার্যক্রম ও জরুরি সাড়াদান কর্মসূচি বিষয়েও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. আরোক টপ্য অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, বিশপ মহোদয়কে অশেষ ধন্যবাদ। তিনি আমাকে কারিতাসের জন্য বেছে নিয়েছেন। আমি আমার সর্বাত্ম দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাবো। এছাড়াও আমার সহকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করি।