বরেন্দ্রদূত পএিকার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
১৯৯০ খ্রীষ্টাব্দে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ জন্ম নিয়ে এটি পা পা করে তার ২৫ বছরে পদার্পণ করেছে। প্রথম দিকে এর কোন লিখিত মুখপত্র বা সংবাদপত্র ইত্যাদি কিছুই ছিল না। ধর্মপ্রদেশের ৫ বছর পূর্তিতে অর্থাৎ ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫ খ্রীষ্টাব্দে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের প্রথম মুখপত্র “বরেন্দ্রদূত” আত্মপ্রকাশ করে। ফাদার সুশীল লুইস পেরেরা ও ফাদার জন যদু ডিঙ্গাডুবা বসে এ বিষয়ে বার বার অনেক আলোচনা-পরামর্শ, চিন্তা ও পরিকল্পনা করে স্বউদ্যোগে নিজেদের লেখা ও ধর্মপ্রদেশের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ছোট পরিসরে তা প্রকাশ করতে শুরু করেন ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫ খ্রীষ্টাব্দে। আমি তখন থাকতাম রাজশাহী থেকে একটু বাইরে সুরশুনি পাড়ায় আর সেখান থেকে প্রতি সপ্তাহে সাইকেলে এসে পত্রিকা সম্পাদনার কাজ করতাম ফাদার জন যদুর সঙ্গে। উনি যেহেতু সহকারী ছিলেন এবং শহরে থাকতেন এবং আমি পাল-পুরোহিত উপরন্তু শহরের বাইরের তাই আলাপ-আলোচনা করে অনেক বার সম্পাদকীয় লেখার দায়িত্ব পড়ত ফাদার জন যদুর উপর। আর উনিও খুব বিশ্বস্তভাবে বেশ কিছু বছর তা করেছেন, বিশেষভাবে আমার যখন অসুবিধা হতো। প্রথম দিকে অবশ্য কোন ব্যতিক্রম ছাড়া সেভাবেই চলছিল। তবে কোন ব্যতিক্রম হলে ২ মাসের সংখ্যা একত্রে বের করা হত। যেমন ১৯৯৫ এর ২ মাসের নভেম্বর-ডিসেম্বর সংখ্যা বিভিন্ন কারণে একত্রে প্রকাশিত হয়। এছাড়া ঐ বছর প্রতি মাসে একটি করে সংখ্যা বের করা হয়। এটি ধর্মপ্রদেশের ছোট একটি মুখপত্র কিন্তু ধর্মপ্রদেশের কর্মকান্ড, ইতিহাস, দর্শন, চিন্তা, পরামর্শ, প্রস্তাব, ঘটনা প্রভৃতির বিবরণ সংরক্ষণে এর কোন বিকল্প নেই। এটি ধর্মপ্রদেশের অন্তত ২০ বছরের অনেক কিছুর সাক্ষী। স্বর্গীয় ফাদার নির্মল কস্তা সে সময় বিশপ ভবনে কর্মরত থেকে একাই এ বিষয়ে সরাসরি সার্বিক সহায়তা দিয়েছেন “বরেন্দ্রদূত” কম্পিউটারে কম্পোজ করা, ছাপানো ও তা দেশের নানা স্থানে বিতরণের কাজে। আন্তরিক ধন্যবাদ স্বর্গীয় ফাদার নির্মল কস্তাকে তার এ উদার সহায়তার জন্য। বর্তমানে “বরেন্দ্রদূত” তার প্রকাশ যাত্রার ২৩ বছর অতিক্রম করছে। এর প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা সম্পাদকীয়তে এটির লক্ষ্য/উদ্দেশ্য সম্পর্কে লেখা হয়েছিল : “নামল সন্ধ্যা-জাগল প্রভাত!” এমনি করে পূর্ণ হল রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ৫টি বছর। পাঁচ বছর পূর্বে ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯০ খ্রীষ্টাব্দে জন্ম হয়েছিল এ ধর্মপ্রদেশের।
বিগত ৫টি বছরে ধর্মপ্রদেশে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা, অনুষ্ঠিত হয়েছে ধর্মপ্রদেশীয় ২টি পালকীয় সম্মেলন, ধর্মপল্লীভিত্তিক চলছে পালকীয় কাজও। এসব কার্যক্রমে রয়েছে সর্বস্তরের ভক্তমণ্ডলীর আন্তরিক সাহায্য সহযোগিতা ও ভক্তিপূর্ণ প্রার্থনা। আর এসব ঘটনা প্রবাহ ও কার্যক্রমূহকে ধরে রাখার জন্য, সেগুলি আপনাদের সঙ্গে সহভাগিতা করার জন্য এবং আপনাদের সকলকে জানানোর জন্য ৫ম বর্ষ পূর্তিতে “বরেন্দ্রদূত” নামক ধর্মপ্রদেশের মাসিক মুখপত্রটির ১ম বর্ষ প্রথম সংখ্যা আপনাদের হাতে তুলে দিতে পেরে আমরা আনন্দবোধ করছি।
“বরেন্দ্রদূত” এর এই সংখ্যায় অনেক বৈচিত্রময় সংবাদ ও কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরার প্রয়াস করা হয়েছে। যারা বিভিন্ন সংবাদ ও কার্যক্রমের বিবরণ দিয়ে এ সংখ্যা প্রকাশে সহযোগিতা করেছেন- তাদের সকলের প্রতি রইলো আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছ।”
বাস্তবতা ও শুরুর পরিকল্পনা ছোট পরিসরে যুগের পরিবর্তনে এর ক্রমযাত্রা ও চলার পথ শুরু হয়। বর্তমানে এর ২৩ তম বছর চলছে। প্রথমে বিশপ ভবন পরে পালকীয় সেবাকেন্দ্র থেকে প্রকাশিত হয়। এ মধ্যে থাকে পালকীয় সংবাদ, ঘটনা, বাস্তবতা, কিছু লেখা, ইতিহাস, প্রবন্ধ, বিভিন্ন শুভেচ্ছা বাণী, বিশপের কর্মকাণ্ড প্রভৃতি।
প্রথমদিকে ফাদার জন যদু ও ফাদার নির্মল কস্তা আমাকে লেখায় সহযোগিতা করেন। পরে অন্যরা কিছুটা সহযোগিতা করেন। এর প্রকাশ নিয়মিত হয় তবে কয়েকবার কম নিয়মিত হয় বিভিন্ন কারণে। যাদের পরিচালনা, সহায়তা ও দায়িত্বে “বরেন্দ্রদূত” বর্তমান পর্যন্ত এসেছে তাদের প্রতি অনেক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা। ধর্মপ্রদেশের ও মুখপত্রে কিছু সুন্দর লেখা স্থান পেয়েছে সেদিক থেকে এর অবদান ও ফলাফল ধর্মপ্রদেশের জন্য অনেক।
১৯৯৯ খ্রীষ্টাব্দে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের জেলাগুলির প্রথম অক্ষর নিয়ে পত্রিকা স্বর্ণচাপা নামে প্রকাশ করা হচ্ছিল। আর তখন এক বিশেষ নকসাও উপরের পৃষ্ঠায় ছাপানো হতো। তবে দুঃখের বিষয় কয়েক বছর পর ২০০৫ খ্রীষ্টাব্দের জানুয়ারীর পর সেগুলি হারিয়ে যায় ‘যারা এ পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন বা মুদ্রণের দায়িত্বে ছিলেন তাদের না জানা বা অবহেলার কারণে।
প্রথম দিকে বেশ কিছু সময় এ সংবাদ পত্রিকা সম্পাদকদের ও বিভিন্ন লেখার লেখকদের নাম ছাড়াই প্রকাশিত হতে থাকে। পত্রিকার একবারে শেষে মাত্র লেখা থাকতো সম্পাদক বা সম্পাদক মণ্ডলী বা ব্যক্তিগত প্রচারের জন্য ইত্যাদি। পরে ১৯৯৬ খ্রীষ্টাব্দে জানুয়ারী ( ১ বর্ষ, ৫ সংখ্যা) থেকে সম্পাদকদের ও পত্রিকায় লেখকদের নাম প্রকাশিত হতে থাকে। এর কিছু দিন আগে ফাদার ইম্মানুয়েল রোজারিও আমাদের সঙ্গে পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্বে যোগ দেন। তাই সেখানে সম্পাদক মণ্ডলীর নাম লিখা হয়: ফাদার লুইস পেরেরা, ফাদার জন যদু রায় ও ফাদার ইম্মানুয়েল কে. রোজারিও প্রকাশনায় রাজশাহী বিশপ ভবন। পরে ১৯৯৬ খ্রীষ্টাব্দের এপ্রিল মাস থেকে ফাদার দিলীপ এস. কস্তাকে সম্পাদক মণ্ডলীতে যোগ করা হয়। এসময় তিনি বনানী লেখাপড়ায় প্রায় শেষের দিকে ছিলেন এবং ডিকন হবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ডিকন থাকাকালে তিনি নানা ভাবে এ পত্রিকার কাজে সহায়তা করছিলেন। যাজক হয়েও তার এ সহায়তা অব্যাহত থাকে। অন্যদিকে মুদ্রণে থাকেন ফাদার নির্মল কস্তা। অবশ্য ফাদার নির্মল কস্তা বেশ কয়েক বছর অর্থাৎ ১৯৯৯ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ ( ৪ বর্ষ, ৭ সংখ্যা) পর্যন্ত তিনি একা বিশ্বস্ততার সাথে এ দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৯৯ এর এপ্রিল-মে সংখ্যায় ৪ বর্ষ, ৮ ও ৯ সংখ্যা) ফাদার লাজারুশ রোজারিও প্রথম বার কম্পোজ ও মুদ্রণের কাজে ফাদার নির্মল কস্তাকে সহায়তা করেন। তার পরের মাসে অর্থাৎ জুন মাসে পত্রিকায় ৪ বর্ষ, ১০ সংখ্যা ফাদার লাজারুশ রোজারিও নিজে একা কম্পোজ ও মুদ্রণের কাজ সম্পন্ন করেন। এভাবে তিনি করতে থাকেন নিজে বা অন্যদের সহায়তা নিয়ে। তখন বিশপ ভবনে অবস্থানরত এসএমআরএ সিস্টারগণ এ বিষয়ে তাকে সহায়তা করেন। অষ্টম ও নবম বছরের মাঝখানে সাময়িক বিরতি ছিল, তবে পরে তা পূর্ণোদ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
স্বর্গীয় ফাদার নির্মল কস্তা ১৯৯৫ খ্রীষ্টাব্দ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯৯ জুলাই পর্যন্ত পত্রিকা প্রকাশের দায়িত্ব পালন করেন। ফাদার লাজারুশ রোজারিও ১৯৯৯ খ্রীষ্টাব্দ জুলাই এর পর থেকে ২০০৪ খ্রীষ্টাব্দের আগস্ট পর্যন্ত। সিস্টার বেনেডিক্টা ও সিস্টার মার্গারেট এসএমঅরএ একসময় বিশপ ভবনে সেবাকাজ করতেন আর সেসময় তারা এর প্রকাশন ও বিতরণের কাজে সরাসরি নিয়োজিত ছিলেন। মাঝখানে ফাদার হেনরী পালমা কম্পোজ, সম্পাদান প্রভৃতি কাজে জড়িত ছিলেন কিছু দিন। ফাদার শংকর ডমিনিক রোজারিও ২০০৪ খ্রীষ্টাব্দের ডিসেম্বর থেকে কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেন। অবশ্য ফাদার হেনরী, ফাদার বিকাশ, ফাদার পাত্রাশ প্রভৃতি ব্যক্তি সে কাজে সহায়তা করেন। পরে পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব নেন ফাদার যোহন মিন্টু রায়। শেষ পর্যায়ে ফাদার নিখিল গমেজ, পালকীয় সেবাকেন্দ্রের পরিচালক ২০১২ থেকে বর্তমান পর্যন্ত তা প্রকাশ করছেন।